shono
Advertisement

পদ্ম নাকি ঘাসফুল, কার দখলে পুরুলিয়া? কী বলছে ৯ আসনের ভোটচিত্র?

জেলার একাধিক আসনে এখনও কাটেনি জোটের জট।
Posted: 09:29 PM Mar 13, 2021Updated: 02:13 PM Mar 19, 2021

সুমিত বিশ্বাস: লোকসভা ভোটের মতো একুশের নির্বাচনেও কি গেরুয়া ঝড়? নাকি ভুল-ত্রুটি শুধরে ঘুরে দাঁড়াবে তৃণমূল? নাকি জোটের জয়জয়কার হবে এই জেলায়? এখন এই আলোচনায় সরগরম জেলার অলিগলি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বঙ্গে সরকার গড়তে বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গলমহলের এই জেলায় জয় পাওয়া। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের সেই জয়ের পথে কাঁটা বিছিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক জনদরদী প্রকল্প।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনে (WB Assembly Election 2021) জঙ্গলমহলের এই জেলায় নয়টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৭টি ও কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে এই জেলায় গেরুয়া ঝড় ওঠে। লোকসভায় বিজেপি দু’লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করে। সেইসময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে বেনিয়ম, সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ উঠেছিল জেলাজুড়ে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসেছিল গোষ্ঠীকোন্দল। রাজ্যের শাসকদলের এই পরিস্থিতির সুবিধা নেয় বিজেপি। তবে বর্তমানে বিজেপির পালের সেই হাওয়া কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে। ‘দিদিকে বলো’, ‘বঙ্গধ্বনি’, ‘দুয়ারে সরকার’, সর্বোপরি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের উপর ভিত্তি করে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শাসকদল। নয়টি বিধানসভাতেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

[আরও পড়ুন : কারও সঙ্গী গরুর গাড়ি, কেউ চড়ছেন নৌকোয়, অভিনব প্রচারে মাত করলেন দুই তৃণমূল প্রার্থী]

৯ আসনে কে কোথায়, দেখে নিন–

মানবাজার: তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত এই কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু এবারও তৃণমূলের প্রার্থী। এই কেন্দ্র তৃণমূলের ‘গড়’। ফলে জেলাজুড়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হলেও এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

বান্দোয়ান: রাজ্যের সবচেয়ে বড় বিধানসভা বান্দোয়ান, তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত। তৃণমূল বিধায়কের নাম রাজীবলোচন সরেন। তিনি প্রার্থী হওয়ায় দলের একটা অংশ তাঁকে মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু আদিবাসী, মাহাতো-সহ বিভিন্ন জনজাতির মানুষ তাঁর পাশে আছেন। তা ছাড়া এই আসনে বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। সেটা ‘প্লাস পয়েন্ট’ তৃণমূলের।

পুরুলিয়া: এই কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বিজেপিতে যাওয়ায় দলে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি আবার এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় সেই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এই আসনে এবার কংগ্রেসের প্রার্থী পার্থপ্রতীম বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদেশ কংগ্রেসের এই নেতা শহর পুরুলিয়ায় পরিচিত মুখ। তবে এখনও এই কেন্দ্রে বিজেপির হাওয়া প্রবল। এবার দাপুটে নেতা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই এই আসনে লড়াই বেশ কঠিন হতে চলেছে।

[আরও পড়ুন : পাখির চোখ বঙ্গ, মার্চের পর এপ্রিলজুড়েও বাংলায় জনসভা মোদির]

জয়পুর: জয়পুর আসনে ভোটে নেই তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল কুমারের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে।সম্প্রতি তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করা জয়পুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দিব্যজ্যোতি সিং দেও এখানে নির্দল হয়ে লড়াই করছেন l এখানে সংযুক্ত মোর্চার জোট ভেস্তে গিয়েছে।  ওই জোট থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন সাংসদ ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোকে প্রার্থী করা হলেও কংগ্রেস এখানে প্রার্থী দিয়ে দিয়েছে। ঝালদা দু’নম্বর ব্লক সভাপতি তথা শিক্ষক ফনি কুমারকে এখানে প্রার্থী করে কুমার সম্প্রদায়ের ভোট টানতে চাইছে কংগ্রেস। এই বিধানসভায় কুমার জনজাতি একটা বড় ফ্যাক্টর। তাছাড়া এখানকার বিজেপি প্রার্থী মুকুলপন্থী ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে আসা প্রাক্তন সাংসদ নরহরি মাহাতোর বিরুদ্ধেও রয়েছে গোঁজ প্রার্থী। ওই গোঁজ প্রার্থী নেপাল চন্দ্র মাহাতো জেলা পরিষদ ১৮ মন্ডলের সভাপতি।  ফলে এই আসন জয়ের অংকটা বেশ কঠিন।

বলরামপুর : দু’বারের বিধায়ক তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে আবার এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কিন্তু এবার জয়ের হ্যাটট্রিক তিনি করতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলবে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে এই কেন্দ্র একেবারে গেরুয়াময়। ফলে এই আসনে এবার কঠিন লড়াই তৃণমূলের। তবে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে গেরুয়া শিবিরে।

বাঘমুন্ডি : একদা কংগ্রেস ‘গড়’ বাঘমুন্ডিতে এবার বিজেপির প্রবল হাওয়া ছিল। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রেই বিজেপির সবচেয়ে বেশি লিড ছিল। এই এলাকা পুরুলিয়ার সাংসদ তথা বঙ্গ বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর খাসতালুক। কিন্তু আসনটি বিজেপি আজসুকে ছেড়ে দেওয়ায় দলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ একেবারে চরমে উঠেছে। আজসুর প্রার্থীকে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছে না। তাই বিজেপির ভোট কংগ্রেসে যেতে পারে। ফলে এই কেন্দ্রের দু’বারের কংগ্রেস বিধায়ক, জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা এই কেন্দ্রের জোট প্রার্থী নেপাল মাহাতো আবার জয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল এখানে ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এখন এই বিধানসভার বাঘমুন্ডি ব্লকে শাসকদলের সংগঠন বেশ ভাল।

কাশীপুর : এই কেন্দ্রে তৃণমূলের দু’বারের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া এবারও প্রার্থী। তবে এখানে তৃণমূল বিরোধী হাওয়া প্রবল। বিজেপি এখানে ‘ঘরের ছেলে’, শিক্ষক, দলের আদিবাসী সংগঠককে প্রার্থী করেছে। আগে এই কেন্দ্র সিপিএমের ‘গড়’ ছিল। এবার সেই ‘গড়’ পুনরুদ্ধারে মরিয়া লাল পার্টি। 

রঘুনাথপুর : তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত এই কেন্দ্র। তৃণমূলের দু’বারের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এবার এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী না হওয়ায় দলের গোষ্ঠীকোন্দলে একেবারে ইতি পড়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কোমর বেঁধে প্রচারে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

পাড়া : তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত এই কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়কের নাম উমাপদ বাউরি। তিনিই এবার প্রার্থী। প্রার্থী নিয়ে বিজেপিতে কলহ থাকলেও এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

সবমিলিয়ে নিজের পুরনো ক্ষতে বেশ কিছুটা মলম লাগাতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি প্রার্থী নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে বিজেপিতেও। সবমিলিয়ে পুরুলিয়ার নয় আসনেই এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবেই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement