রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রক্তে সংগ্রামের বীজ বুনে দেওয়া স্লোগান, দেওয়াল লিখন, গণসংগীত – এসবই বাম রাজনীতির অঙ্গ বলে পরিচিত। আর ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া সদস্যরা এই সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এবার বাম সংস্কৃতিতে আমূল বদলের ছবি চোখে পড়ছে। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফওআই (DYFI) আমজনতার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে রাজ্যজুড়ে ‘ইনসাফ যাত্রা’ শুরু করেছে। নেতৃত্বে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক তথা লড়াকু তরুণী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)। আর সেই যাত্রায় সিপিএমের চিরচেনা গণসংগীতের বদলে বেজে উঠছে হালফিলের হিন্দি গান! যে গান অবশ্য লড়াইয়ের কথাই বলে। তবে কি লাল পার্টিতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এল? এই প্রশ্ন উঠছেই। এনিয়ে অবশ্য বামশিবিরে নানা মুনির নানা মত।
‘আমরা করব জয়’ থেকে ‘পথে এবার নামো সাথী’ – এমনই সব গান একসময় শোনা যেত সিপিএমের যে কোনও কর্মসূচিতে। এমনকী পাড়ার মোড়ে মোড়ে ছোটখাটো সভা-সমিতিতেও বাজত এসব গান। কিন্তু এবার সেই সংস্কৃতিতে বদল দেখা গেল। ডিওয়াইএফআই-এর দীর্ঘ ‘ইনসাফ যাত্রা’ (Insaaf Yatra) সোশাল মিডিয়ায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে চোখ রাখলেই ইনসাফ যাত্রার হাল হকিকত সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। আসলে পথে প্রচারের পাশাপাশি ভারচুয়াল প্রচারেও জোর দিচ্ছেন সিপিএম (CPM) যুবরা। তারই হাতিয়ার হিসেবে রিলস, ভিডিও-ও তৈরি হচ্ছে হরেক। আর সেসবে আগের মতো গণসংগীত নয়, বরং শোনা যাচ্ছে আজকের জনপ্রিয় বলিউডি সিনেমার (Bollywood Songs)গান!
[আরও পড়ুন: প্রয়াত সোমনাথবাবুর সিদ্ধান্তকে ঢাল করেই সংসদে বলতে দেওয়া হল না মহুয়াকে]
এই যেমন মীনাক্ষীদের যাত্রার ঝাড়গ্রাম (Jhargram) থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর প্রবেশের সময় একটি রিল তৈরি হয়েছে, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে দেশের সেনাদের কৃতিত্ব নিয়ে তৈরি ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছবির গান। এছাড়া আরও দু, একটি রিলে অভিষেক বচ্চন, রাজকুমার রাও অভিনীত সিনেমার গান শোনা গেল। তবে ভাষা যা-ই হোক, শিল্পী যাঁরাই হোন, সব কটি গানই কিন্তু সংগ্রামের কথা বলে, মানুষের অধিকারের কথা বলে। সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাসদের গানে আজকালকার বামপন্থীরা না-ই বা বাঁধলেন আন্দোলনের সুর, আজকের গায়ক-গায়িকারাই বা কম কী?
[আরও পড়ুন: অভিষেকের দপ্তরের হস্তক্ষেপ, দুদিন পর এসএসকেএমে ভর্তি কোচবিহারের রোগিণী]
তবু বামপন্থী রাজনীতিতে তো শৃঙ্খলা বলে একটা কথা আছে, তার কী হবে? হিন্দি গানে আন্দোলনের রিলস তৈরি করা, ভিডিও আপলোড করা কি শৃঙ্খলাভঙ্গ নয়? এনিয়ে দলের কিন্তু পক্ককেশ কমরেডদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। আরেকাংশ খানিকটা ঢোঁক গিলে বলছে, সংস্কৃতি বা রুচি বদলের বিষয় নয়। দলের সাংস্কৃতিক ধারা বজায় রেখেও মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে সময়োপযোগী হওয়া দরকার। আর সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য রিলস, ভিডিওয় যদি জনপ্রিয় গানের ব্যবহার হয়েও থাকে, তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়। সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা কালচারাল রেভোলিউশন (Cultural Revolution) কথাটা বাম রাজনীতিতে নতুন নয়। যার সারবত্তা জনসমর্থন ধরে রাখতে রাজনীতিতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাই পুরনো ভাবধারায় আটকে না থেকে সমসাময়িকতাকে কাছে টেনে নেওয়াই বুদ্ধির কাজ।