শাহজাদ হোসেন, জঙ্গিপুর: ভারতীয় ন্যায় সংহিতা লাগু হওয়ার পর গণপিটুনি-হত্যামামলায় দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণায় দেশে দ্বিতীয় হিসেবে নজির মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের বিচার। ওয়াকফ হিংসায় কুপিয়ে, পিটিয়ে খুন হওয়া জাফরাবাদের হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের ১৩ জন খুনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(২), ৩১০(২), ৩৩১(৫), ১৯১(৩), ১২৫(২), ১২৬(২), ৩৩২(এ) এবং ৩(৫) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনান বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। বলা হচ্ছে, দেশের মধ্যে এই মামলা দ্বিতীয়, যেখানে গণপিটুনিতে পৃথক ধারা যুক্ত করে বিচার প্রক্রিয়া চলেছে।
জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বাইরে কড়া নিরাপত্তা। নিজস্ব ছবি।
মঙ্গলবার এই সাজা ঘোষণার পর এডিজি, দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, "আজ মামলার রায় ঘোষণা করেন অতিরিক্ত জেলা জজ। আদালত সব অভিযুক্তকেই দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলাটি গুরুত্ব পেয়েছে আরও একটি কারণে। নতুন ফৌজদারি বিধির ১০৩(২) ধারায় গণপিটুনিতে মৃত্যুর অভিযোগে দেশে এটি দ্বিতীয় সাজা।"
পুলিশ আরও জানিয়েছে, মামলাটির দ্রুত কিনারা করতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল প্রযুক্তিগত প্রমাণ। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সূত্র মেলে অভিযুক্তদের গতিবিধির। পাশাপাশি ‘গুগল ম্যাপস লোকেশন ভিজ্যুয়ালাইজেশন’-এর মাধ্যমে অকুস্থলে অভিযুক্তদের উপস্থিতি ও চলাচল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এরপর নিশ্চিত হতে সিসিটিভিতে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সঙ্গে অভিযুক্তদের হাঁটার ধরন মিলিয়ে দেখতে ‘গেট প্যাটার্ন অ্যানালিসিস’-ও করা হয়। এছাড়া অপরাধে ব্যবহৃত অস্ত্রে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ মৃত বাবা-ছেলের ডিএনএ-র সঙ্গে মেলানো হয়। তা মিলে যাওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে গুরুত্ব সহকারে বিচার করে আদালত।
জাফরাবাদ কাণ্ডে দোষীদের আদালতে পেশ। নিজস্ব ছবি।
এই মামলায় ৫৬ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। আর আটমাসের মাথায় বিচার সম্পূর্ণ হল। মঙ্গলবার দোষী ১৩ জনের সাজা ঘোষণার পর সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, "ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু হওয়ার পর গোটা দেশে এটি মাত্র দ্বিতীয় মামলা যেখানে অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে গণপিটুনির ধারায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হলো। আমরা মৃত্যুদণ্ডের আবেদন রেখেছিলাম বিচারপতি কাছে। তিনি বিবেচনা করে দেখেছেন সেই পরিপ্রেক্ষিতেই যাবজ্জীবন সাজা-সহ ডাকাতি, বাড়ি ভাঙচুর করে তাদের বের করে নিয়ে আসার ঘটনা এবং একাধিক অভিযোগে ১০ বছর করে সাজা শুনিয়েছেন। অপরদিকে হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।"
