অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী টানার লক্ষ্যে চিকিৎসকদের উপহার দেওয়া হয়, এই অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় আগে থেকেই ছিল। এবার প্রকাশ্যে সেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। যদিও মালিকের দাবি, এই ধরনের কোনও বিজ্ঞাপন তিনি দেননি। পুরোটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার তেমাথানি এলাকার 'যমুনা ডায়াগনস্টিক প্যাথলজি অ্যান্ড পলিক্লিনিকে'র বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে লেখা রয়েছে বছরে ৫০ হাজার টাকার ব্যবসা দিলে একটি স্মার্টফোন উপহার দেওয়া হবে চিকিৎসকদের। বছরে ১ লক্ষ টাকার ব্যবসা দিলে একটি ফাইভ স্টার ফ্রিজ। ২ লক্ষ টাকার ব্যবসা দিলে একটি ইলেকট্রিক স্কুটার ও বছরে ২৫ হাজার টাকার ব্যবসা দিলে ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। আর এই পুরো হিসাব অর্থাৎ চিকিৎসক কত টাকার ব্যবসা দিচ্ছেন বা কতজন রোগী পাঠাচ্ছেন তার হিসাব চিকিৎসকদের রাখতে হবে বলে ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। আরও অভিযোগ বিগত প্রায় বছর খানেক ধরে তিনি এই বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছেন।
ফলে এই নিয়ে অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মধ্যে একদিকে যেমন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে অপরদিকে চিকিৎসকরাও অপমানিত বোধ করতে শুরু করেন। তারপর এই নিয়ে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরে যাবতীয় প্রমাণ-সহ একটি অভিযোগ জমা হয়। তার ভিত্তিতেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এই প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মালিককে একটি নোটিস পাঠায়। সেখানে বলা হয় এই সবকাজ বন্ধ না করলে সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশংকর সারেঙ্গী বললেন, "পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সঙ্গে প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মালিককে নোটিস পাঠিয়ে বলা হয়েছে এসব বন্ধ না করলে সাতদিনের মধ্যে সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হবে।" জানা গিয়েছে, নোটিস পাওয়ার পরই প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মালিক এই বিজ্ঞাপন সরিয়ে দিয়েছেন।
যদিও প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মালিক চন্দন সেন বিজ্ঞাপনের কথা অস্বীকার বলেন, "কে বা কারা এই ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন জানি না। এরকম কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। আমি অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের মালিকদের মতোই চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করে রোগীদের পাঠানোর অনুরোধ করি। তার সঙ্গে চিকিৎসকদের যা পাওনা সেটি দেওয়ার কথা বলি। এর বাইরে আর কিছু নয়। তাছাড়া আমার সেন্টারে সংগৃহীত রক্ত, মল,মূত্র ও কফ পরীক্ষা করা হয় না। তা কলকাতার একটি সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রিপোর্ট এলে রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।" পশ্চিম মেদিনীপুর ডায়াগনস্টিক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সবং-পিংলা শাখার সম্পাদক অরুণ সাঁতরা বলেন, "ওই সেন্টারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের উচিত এসব অবৈধ কাজকর্ম যাতে কোনও প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে না হয় তার দিকে নজরদারি বাড়ানো। এই সেন্টারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত।"
