টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে বাঁকুড়ার সংখ্যালঘু ও আদিবাসী এলাকায় তৎপরতা বাড়াচ্ছে সিপিএম। বিশেষ করে সাগরদিঘি উপ-নির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে জোটপ্রার্থীর জয়ের পর আরও বেশি উজ্জীবিত বামেরা। সিপিএমের দাবি, রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতোই বাঁকুড়া জেলাতেও তাদের নানা কর্মসূচিতে ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে জেলার সংখ্যালঘু ও আদিবাসী এলাকাগুলিতে বুথে বুথে মিছিল বা এরিয়া কমিটি-ভিত্তিক জনসভায় আগের চেয়ে অনেক বেশি ভিড় হচ্ছে। ছেড়ে যাওয়া অনেক পুরানো মুখেরও ফের দেখা মিলতে শুরু করেছে।
বাঁকুড়ারর (Bankura) দক্ষিণ অংশে যেমন আদিবাসীদের বাস, তেমনই উত্তরের বিস্তীর্ন এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। ওন্দা, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, কোতুলপুর, জয়পুর ব্লকের অনেক গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগ্য নির্ধারিত হয় সংখ্যালঘু ভোটে। গত শনিবার মেজিয়ায় দীর্ঘ ১০ বছর বাদে মিছিল হয়েছে সিপিএমের। মিছিলে হেঁটেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক অমিয় পাত্র, মেজিয়া ব্লকের এরিয়া সম্পাদক শেখ ইলিয়াসরা। যদিও শেখ ইলিয়াসের অভিযোগ দলীয় এই কর্মসূচির জন্য শুক্রবার রাত থেকে দলীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিল মেজিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। তবে ওই রাতেই বেশ কিছু এলাকায় সিপিএমের পতাকে খুলে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তারপরেও এই এলাকায় মিছিল করেছেন সিপিএমের নেতাকর্মীরা। সেই রেশ কাটতে না কাটতে গত রবিবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ওই সদস্য মিছিল করেন রানিবাঁধ ব্লকের রাওতড়া অঞ্চলের পুতুলডাঙ্গা এলাকায়। একদা মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় দীর্ঘ প্রায় এক দশক বাদে দলীয় কর্মসূচি সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন রানিবাঁধ এরিয়া কমিটির সম্পাদক তথা বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য লক্ষ্মীকান্ত টুডু। মিছিল শেষ একদা মাওবাদী অধ্যুষিত আদিবাসী এলাকা বক্তব্যও রাখেন মিছিলে উপস্থিত সিপিএম নেতারা।
[আরও পড়ুন: ভাঙাচোরা সামগ্রীর দোকান থেকে উদ্ধার বস্তাবন্দি আধার কার্ড, পাসবই! শোরগোল পুরুলিয়ায়]
সম্প্রতি বাঁকুড়ার মন্দির নগরি বিষ্ণুপুরে শুরু হওয়া পরিবহণ শ্রমিকদের জাঠা বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় হয়ে সোনামুখীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিষ্ণুপুরে শেষ হয়েছে। সিপিএমের এই জাঠা উপস্থিত সিটু নেতাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুর, বড়জোড়া, সোনামুখী এবং কোতুলপুর ও জয়পুর এলাকায় সংখ্যালঘু এলাকায় সিপিএমের এই কর্মসূচিতে ভিড় দেখা গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। সিটি নেতা বানেশ্বর গুপ্ত বলছেন, পরিবহণ শ্রমিকদের এই জাঠা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যাওয়ার সময় মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল বেশ ভালই। সিপিএমের একটা অংশের দাবি, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তুলনায় অনেকটাই বেশি। সেই কারণেই এই সব এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকে এসে আদিবাসী বলয়ে আস্থা অর্জনের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
প্রশ্ন হল, বামেরা কি তৃণমূলের হাত থেকে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী ভোট ছিনিয়ে নিতে পারবে এই বাঁকুড়ায়? বিশেষ করে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে যদি বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেস এবং আই এস এফের জোট হয়, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী ভোট অটুট রাখা সম্ভব হবে কি? সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন , আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাধারন মানুষ পঞ্চায়েত গড়বে। চোর তৃণমূল দলকে পঞ্চায়েত থেকে বিতাড়িত করতে হবে। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলছেন, সব জায়গাতেই আমরা দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ করছি। ষেখানে ষেখানে মানুষ এগিয়ে আসছে সেখানে সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে কর্মসূচি বাড়ানো হচ্ছে। সংখ্যালঘু ও আদিবাসী ভোট হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তথা রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডি বলছেন, “সিপিএমকে কোনও মানুষই আর বিশ্বাস করেন না। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের উন্নয়নের সরাসরি ফল পাচ্ছেন মানুষ। সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে মানুষ।”