সুমন করাতি, হুগলি: যত কাণ্ড আরামবাগে! ছিল সিপিএম (CPM), হয়ে গেল বিজেপি (BJP)। এভাবেই হুগলির বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কার্যালয়গুলি বদলে যাচ্ছে একেক রঙে। আজ যিনি বামেদের, কাল আবার তিনি রাম সমর্থক। আর কার্যালয়গুলির এমন রংবদলে হতবাক এলাকার মানুষ। ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া লালচে দেওয়ালে এখনও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কাস্তে-হাতুড়ির ছবি। ইতিউতি ছড়িয়ে আছে কিছু লাল ঝান্ডাও। সেই একতলা পার্টি অফিসের উপরেই এখন পতপত করে উড়ছে বিজেপির গেরুয়া পতাকা। কামারপুকুরের শ্রীপুরে সিপিএমের একটি পার্টি অফিস এভাবে রাতারাতি বিজেপির হয়ে যাওয়ায় বিস্মিত সকলে। যদিও সিপিএম থেকে বিজেপি হওয়া এক নেতা জানিয়েছেন, জোট নিয়ে ক্ষোভের বশেই কমরেডরা পার্টি অফিসটি বিজেপির হাতে তুলে দিয়েছেন।
সিপিএমের কৃষক সভার পার্টি অফিস এভাবে বিজেপি দখল করে নেওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে একদা লালদুর্গ আরামবাগে (Arambag)। বিষয়টা নিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই কটাক্ষ করছে তৃণমূল। রাম-বাম জোটের প্রসঙ্গ তুলে ঘাসফুল শিবিরের বক্তব্য, ‘‘কাস্তে-হাতুড়ি-তারা ও পদ্মফুলের পাশাপাশি অবস্থান। যখন খুশি বদলে যাচ্ছে।’’ শ্রীপুরে সিপিএমের কৃষক সভার এই পার্টি অফিস এর আগেও হাতবদল হয়েছে। তখন সিপিএমের হাত থেকে তা দখল করেছিল তৃণমূল। পরে আবার তৃণমূলের কাছ থেকে বিজেপি তা দখল করে। কিছুদিন আগে বিজেপির কাছ থেকে পার্টি অফিস পুনরুদ্ধারের খবর হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। এবার ফের পার্টি অফিস দখল নিল বিজেপি।
[আরও পড়ুন: চটকলের ৯০ শতাংশের বেশি কর্মীর স্থায়ীকরণ, শ্রমিকদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত রাজ্যের]
আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ এদিন ওই পার্টি অফিসে বিজেপির পতাকা উত্তোলন করে কর্মীদের মিষ্টিমুখ করান। বিজেপির মহিলা সমর্থকদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এই মুহূর্তে আরামবাগ মহকুমার চারটি বিধানসভা আসনই বিজেপির দখলে। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী দলের পার্টি অফিস দখল করে কী বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি? প্রাক্তন সিপিএম কর্মী তথা বর্তমানে বিজেপি কর্মী অবনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরাই পার্টি অফিসটা তৈরি করেছিলাম। প্রথমে তৃণমূল নিয়েছিল। তার পরে বিজেপি নিয়ে নেয়। আবার সেটা সিপিএম নিয়ে নেয়। তবে জোট নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়ায় বিজেপিতে যোগদান করে পার্টি অফিসটি বিজেপির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘সিপিএমের লোকজন পার্টি অফিসটি দিয়ে দিয়েছে। তিনি পার্টি অফিস হস্তান্তরের কাগজও তুলে দেখান।’’ এ প্রসঙ্গে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অভয় ঘোষ বলেন, ‘‘পার্টি অফিস দখল করে ক্ষমতার দম্ভ দেখানো যায় না। সিপিএমের গণসংগঠনগুলো বিজেপিকে লিখিতভাবে পার্টি অফিস অর্পণ করবে এই কালচারে আমরা বিশ্বাসী নই।’’
[আরও পড়ুন: কলকাতা জাদুঘরে বোমাতঙ্ক, বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ‘জঙ্গি সংগঠনের’]
অন্যদিকে, এদিনই সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগদান করলেন দুই শতাধিক কর্মী-সমর্থক। সন্ধ্যায় আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি অফিসে এসে বিজেপি সভাপতির হাত থেকে পদ্মফুলের পতাকা তুলে নিলেন সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা। আরান্ডি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিয়ারা এবং ঘোলপুড়ো গ্রামের দুই শতাধিক সিপিএম কর্মী সমর্থক আরামবাগ বিধায়ক মধুসূদন বাগ এবং আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের হাত থেকে দলের পতাকা নিয়ে যোগদান করলেন বিজেপিতে। যোগদানকারী কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সিপিএম করেও তাঁরা কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি। এমনকী কোনও সরকারি অনুদানও মেলেনি। তাই তাঁরা বিজেপিতে যোগদান করেছেন।
এ বিষয়ে সিপিএমের জেলাস্তরের নেতা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি নিজেদের লোককে যোগদান করিয়ে সিপিএমের নামে চালাচ্ছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আমাদের দলেই আছেন।’’ যদিও এই ঘটনায় অবাক নয় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের বক্তব্য সিপিএম দলের ভোটেই তো বিজেপির ভোট বেড়েছে। সিপিএমরাই এখন বিজেপির হয়ে লাফালাফি করছে। এটা ভোটের সময় মানুষ ঠিক উত্তর দেবে।
দেখুন ভিডিও: