নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: এক জঙ্গি হামলা কেড়েছে দাদার প্রাণ। প্রত্যাঘাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শত্রুদেশের জঙ্গি ঘাঁটি। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৫০ জঙ্গির। শহিদদের প্রতি এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য আজকের দিনে। মঙ্গলবার পুলওয়ামা হামলার নদিয়ার পলাশীপাড়ার শহিদ জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলাকালীনই ভারতীয় বায়ুসেনার এই প্রত্যাঘাতের খবর পায় তাঁর পরিবার। তাতেই জওয়ানের বোনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পাকিস্তানে এর চেয়েও বড় হামলা চাই। বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে যাক ওই দেশ।’’
[‘আমার ক্ষতি পূরণ হবে না’, ভারতের প্রত্যাঘাতে নিরুত্তাপ শহিদ বাবলু সাঁতরার স্ত্রী]
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে ঢুকে জঙ্গি হামলায় শহিদ ৪৯ জনের মধ্যে ছিলেন ৫৪ নং ব্যাটালিয়নের জওয়ান নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাস। নিয়ম মেনে মঙ্গলবার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়ার বাড়িতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পরিবার। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়েছে কাজ। এমনই সময়ে টেলিভিশনে খবর দেখতে পান সুদীপের বোন ঝুম্পা। দেখেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে, মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলে জঙ্গিঘাঁটি নির্মূল করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ৩০০ থেকে ৩৫০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে। খবর দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন ঝুম্পা। দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে, মনে করে ঝুম্পা এই খবর সবাইকে জানায়। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মাঝেই এমন খবরে শোক কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে।
[শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ, রিপোর্ট এল রোগীর মৃত্যুর পর!]
এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঝুম্পা বলেন, ‘‘পাকিস্তানে এর চেয়ে তিনগুণ হামলা চাই। ম্যাপ থেকে মুছে যাক পাকিস্তান। সরকার এবং বায়ুসেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ। প্রয়োজনে যুদ্ধও চাই। কত জনের কোল খালি করেছে। আমার দাদাকেও কেড়ে নিয়েছে।’’ এর আগে দাদার মৃতদেহের সামনে শোকগ্রস্ত ঝুম্পা অবশ্য অভিযোগ তুলেছিলেন, ‘‘কনভয়ে এতজন জওয়ান ছিল৷ তা সত্ত্বেও যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গাফিলতি ছিল। ওই জায়গায় এর আগেও মানুষ মারা গিয়েছে। সেনারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে শহিদ হল ঠিকই। কিন্তু আমাদের বুকটা তো খালি হল।’’ চোখের জল মুছতে মুছতে বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন ঝুম্পা৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখন দেখছি কীভাবে ধাক্কা মারল গাড়িটা। তখন দেখিনি। গাফিলতি ছিল তো বটেই। আড়াই হাজারের বেশি ফোর্স আসছে। যদি সবাইকে উড়িয়ে দিত। তাহলে কতজন মারা যেত? কত মায়ের কোল খালি হত? আমার দাদাকে চাই। কিন্তু আর তো ফিরে পাব না।’’ এসবের পর কেটে গিয়েছে ১২ দিন। তারপর ৪৯ শহিদের ঝরা রক্তের প্রতিশোধ নিল ভারতীয় বায়ুসেনা। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেলেও শহিদের বোনের দাবি, পাকিস্তানকে আরও বেশি করে শিক্ষা দিতে হবে। নাহলে তাঁর মতো প্রিয়জন হারানোর বেদনা কমবে না আরও অনেকের।
