shono
Advertisement
Hooghly

রুই-কাতলা থেকে চিতল-মৃগেল, ব্যান্ডেলের ৫১৮ বছরের পুরনো মাছের মেলা আজও টানে মৎস্যপ্রেমীদের

পাশের আমবাগানে সেই মাছ ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
Published By: Suhrid DasPosted: 07:27 PM Jan 15, 2025Updated: 07:27 PM Jan 15, 2025

সুমন করাতি, হুগলি: রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি থেকে চুনো মাছ। মাছ কিনতে ভিড় করেছেন বহু মানুষ। কেবল এলাকার নন, দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন মাছ  কেনার জন্য হাজির হয়েছেন। না, কোনও বাজার নয়। এ এক মেলা, মাছের মেলা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। কেবল বিকিকিনিই নয়। পাশের আমবাগানে সেই মাছ ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

Advertisement

এই মেলায় রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুটি, শুটকি কী না পাওয়া যায়! রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা ভেটকি, শঙ্কর মাছও পাওয়া যায়। বিভিন্ন মাপের কাঁকড়াও পাওয়া যায় সেখানে। পৌষ সংক্রান্তির পরের দিন হুগলির ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলায় নিয়ে হইচই বিভিন্ন মহলে। ৫০ কিলো ওজনের মাছও বিক্রি হয় এই মেলায়। চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বাড়িতেই বসে এই মেলা।

এক-দুই বছর নয়। গত ৫১৮ বছর ধরে চলছে এই মাছের মেলা। তবে এই মেলার আয়োজন মাত্র একদিনই হয়। এই মেলাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন বিভিন্ন দোকানিরা। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাস, গল্পগাঁথাও। মেলার সূত্রপাত হয় গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরই। কথিত আছে, ওই এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁর ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নেন। তিনি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দিক্ষা নেবেন বলে পানিহাটিতে তাঁর কাছে যান।

তবে তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। সেজন্য তাঁকে দিক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন নিত্যানন্দ। দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফিরে আসেন রঘুনাথ। ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে, সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের মানুষ তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করেন। তিনি ভক্তদের বলেন, বাড়ির পাশে আমগাছ থেকে জোড়া আম পেড়ে আনতে। পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতেও বলা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী পুকুরে জাল ফেলতেই মেলে জোড়া ইলিশ। একই সঙ্গে গাছ থেকে আম আনতেই অবাক হয়ে যান গ্রামের মানুষ। এই ঘটনা কীভাবে সম্ভব, চর্চা শুরু গিয়েছিল। পাশাপাশি তার ঐশ্বরীক ক্ষমতা নিয়েও মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ে।

সেই বছরের পর থেকে প্রতি বছর ভক্তরা রাধা-গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করেন। পয়লা মাঘ আয়োজিত এই মেলায় দূরদূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী হাজির হন। পুকুর, নদী ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছেরও দেখা মেলে সেখানে। হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় মাছ কিনতে যান। ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি হয়।

শুধু মাছ কিনেই শেষ নয়, পাশের আম বাগানে সেই মাছ ভেজে চলে খাওয়া দাওয়া। অতীতের সেই ঘটনা এখনও একইভাবে চলে আসছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি থেকে চুনো মাছ।
  • দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন মাছ  কেনার জন্য হাজির হয়েছেন।
  • এ এক মেলা, মাছের মেলা।
Advertisement