অর্ণব দাস, বারাসত: অশোকনগরের নাবালিকা অপহরণের তদন্তে নেমে স্পায়ের আড়ালে দেহব্যবসার পর্দাফাঁস করেছে বারাসত জেলা পুলিশ। যদিও দেহব্যবসার এই চক্র অজানা নয় স্থানীয়দের। প্রতিটি স্পা লাগোয়া বাসিন্দারা বা ব্যবসায়ীরা রোজ দেখেন অচেনাদের আনাগোনা। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি স্পায়ে কমবেশি দু-তিন মাসে বদলে যায় কাজ করা তরুণী-যুবতীদের মুখ। স্পা সেন্টারগুলির খদ্দেরদের যাতে একঘেয়েমি না হয়, সেই কারণেই এমনটা করা হয় বলেই জানা গিয়েছে।
এক্ষেত্রে স্পা-গুলি তরুণী-যুবতীদের একে অপরের মধ্যে অদল বদল করে কাজ চালায়। অনেকে তরুণী-যুবতী আবার স্পা ছেড়ে চলে যান পানশালার কাজে। পানশালার কাজ করা যুবতী আবার চলে আসে স্পা সেন্টারে। এই কাজটাই করে থাকে দালালচক্র। এছাড়াও নতুন মেয়েদের এই কাজে যুক্ত করার কাজ তো আছেই। এর জন্য প্রতিবারই মোটা অঙ্কের টাকা নেয় দালালরা।
হাবড়া থেকে মধ্যমগ্রাম, দত্তপুকুর, অশোকনগরে স্পায়ের ব্যবসা রমরমা। তবে সবথেকে বেশি স্পায়ের সংখ্যা বারাসতে। জানা গিয়েছে, স্পা সেন্টারগুলিতে সব থেকে বেশি চাহিদা ২০ বছরের কম বয়সিদের। এদের ক্ষেত্রে টাকাও বেশি পাওয়া যায়, আড়াই থেকে তিন হাজার। বয়স বেশি হলে টাকার অঙ্ক কমে যায়। তবে, নূন্যতম রেট দেড় হাজার টাকা। নাবালিকা হলে তো দর কমপক্ষে পাঁচ হাজার। আর বয়স বাড়লে এই যুবতীরাই হয়ে ওঠে দালাল। তবে, তরুণী-যুবতীদের খদ্দের পিছু জোটে অর্ধেক টাকা, সঙ্গে টিপস। আর বাকি অর্ধেক টাকা ঢোকে স্পা মালিকের পকেটে। দিনে অন্তত দু'জন খদ্দের হলে মাসে কমবেশি ৫০-৬০হাজার রোজগার করে এই তরুণী-যুবতীরা। এদের জীবনযাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ে।
যা দেখে এদের পরিচিতরাও বিপথে যেতে উৎসাহিত হয়। এনিয়েই এবার প্রশ্ন উঠছে, প্রকাশ্যে রমরমিয়ে স্পায়ের আড়ালে এই দেহব্যবসার চক্র সকলের জানা হলে, এতদিন কেন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। পুলিশের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্ত স্পায়ের তালিকা চেয়ে তদন্ত চালানোর কথা জানানো হয়েছে। সেগুলিতে অভিযান, হানা দেওয়ার হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি আবার অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কারণে যাচাইয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কথা জানিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে। ফলে সামাজিক এই ব্যাধি সারবে কিভাবে সেটাই এখন প্রশ্নের মুখে। এই নিয়ে অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, পুলিশ প্রশাসনের উচিত মনিটারিং সেল গঠন করা।
