পলাশ পাত্র: সাতকূলে তাঁর কে কোথায় আছে কেউ জানে না। হিন্দু না মুসলিম তাও কেউ কোনওদিন জানতে চায়নি। আসলে জানার প্রয়োজনও বোধ করেননি কেউ। নব্বই ছোঁয়া মানুষটিকে সকলেই ভালবাসতেন। এলাকার এক প্রাচীন বটগাছের নিচে একাই থাকতেন। হেন লোক নেই যাঁর সঙ্গে না হেসে দুটো কথা বলেছেন। তিনিও কখনও ভেদাভেদ করেননি। তাঁর প্রয়াণেও তাই কেউ ভেদাভেদ করল না। এলাকার প্রিয় সনৎ মহারাজের মৃত্যুতে একজোট করিমপুর নাটনা পূর্বপাড়ার বাসিন্দারা। জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুতেও অপূর্ব সম্প্রীতি উপহার দিয়ে গেলেন ওই বৃদ্ধ।
[বৃদ্ধার কাতর আর্তিতে সাড়া, বিলাসীর চিকিৎসার ভার নিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর]
বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। এলাকার হিন্দু-মুসলমানরা একসঙ্গে মিলেই আয়োজন করেন সবকিছু। পেশায় সকলেই কৃষক। তাই নিজেদের চাষের চাল, ডাল, সবজি দিয়ে এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেন তাঁরা। চাঁদাও ওঠে বেশ ভালই। তাতেই পাত পেড়ে ভোজ খেল কয়েক হাজার মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে এই কাজে অবশ্য করিমপুর থানার ওসি তাপস ঘোষও সহযোগিতা করেন।
এদিন সকাল থেকেই কালীমন্দিরে থাকা বটগাছের গোড়ায় একদিকে চলছিল হরিনাম সংকীর্তন, অন্যদিকে চলছিল গীতা ও ভাগবত পাঠ। কালীমন্দিরের গায়ে রয়েছে ইদগাহ। এখানে মুসলিমরা নমাজ পড়তে আসেন। আবার পাশের কালীমন্দিরে হিন্দুরা পুজোও করেন। মন্দিরের ভিতর থাকা প্রাচীন বটগাছের নিচে গত দুবছর ধরে থাকতেন সনৎ মহারাজ। এলাকার মানুষের দেওয়া খাবারই তিনি খেতেন এবং গ্রামের লোকজনই তাঁকে দেখাশুনা করতেন। নব্বই বছরের এই বৃদ্ধ ১৫ জানুয়ারি মারা যান। চাঁদা তুলে তাঁর কথামতো বৈষ্ণব মতে ভৈরব নদীর তিরে মানিকপুর শ্মশানে সৎকার করা হয়।
[পর্যটকদের ঘরে ঢুকে হাঙ্গামা মদ্যপ পুলিশ আধিকারিকের, লাটাগুড়িতে চাঞ্চল্য]
কী তাঁর সঠিক পরিচয় জানা না গেলেও নদিয়াতে যে তাঁর বাড়ি তা পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে ওসি তাপস ঘোষ বলেন, ‘এলাকায় হিন্দু-মুসলিম যেভাবে ঝাঁপিয়ে এদিনের অনুষ্ঠান করল তা দেশে সত্যিই সম্প্রীতির নজির গড়ল। আমি যে এর মধ্যে থাকতে পেরেছি তাতে আমার ভাল লাগছে।’
The post বৃদ্ধের সৎকারে একজোট হিন্দু-মুসলিম, নদিয়ায় সম্প্রীতির ছবি appeared first on Sangbad Pratidin.
