বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: বাংলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা নেতারা প্রকাশ করেছিলেন তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে হারের পরই। এবার নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের সমর্থনে জনগণকে বোঝানোর জন্য বিজেপি মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে কর্মশালা চলাকালীন নদিয়ায় বোঝা গেল, সত্যিই দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব কতটা প্রকট। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সামনেই গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপি কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রানাঘাটের নজরুল মঞ্চের গন্ডগোল পরে দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ সামলানো গিয়েছে বলে খবর।
CAA নিয়ে জনগণকে বোঝাতে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার মোট সাতটি সাংগঠনিক জেলার মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল বিজেপির পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার নদিয়ার রানাঘাটের নজরুল মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছিল ওই কর্মশালার। যদিও ওই কর্মশালার মধ্যে তিনটি জেলা পরিষদ মণ্ডলের বিজেপির কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে গন্ডগোল বেঁধে যায়। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সামনেই নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার ৩৪, ৩৫ ও ৩৭ জেলা পরিষদে মণ্ডল সভাপতি পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় গন্ডগোল। পরে উপস্থিত নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে অবস্থা স্বাভাবিক হয়।
[আরও পড়ুন: বছরের শুরুতেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি, সিকিম-দার্জিলিংয়ে তুষারপাত]
মণ্ডল সভাপতির পদ যিনি খুইয়েছেন, তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, গত লোকসভা নির্বাচনেও তাঁরা প্রাণপণ পরিশ্রম করে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে দলকে জিতিয়েছিলেন। অথচ সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পরেই তাঁদের বদল করা হল। কেন এই বদল, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁরা ওই কর্মশালায় শোরগোল তুলে দিয়েছিলেন। নিজেদের মধ্যে তাঁরা জড়িয়ে পড়েছিলেন বচসায়। পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছিল। শেষপর্যন্ত নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
যদিও নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার অশান্তি নতুন নয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এর আগে জগন্নাথ সরকারের অনুগামী বলে পরিচিত রাখাল সাহার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পর্যন্ত তোলা হয়েছিল। এলাকাছাড়া হয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল রাখাল সাহাকে। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদে তখন বসেছিল মানবেন্দ্রনাথ রায়। যদিও তা মেনে নিতে পারছিলেন না জগন্নাথ সরকারের অনুগামীরা। রানাঘাটে জেলার পার্টি অফিসের বাইরে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে মারধর পর্যন্ত খেতে হয়েছে। বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল চলে আসে প্রকাশ্যে বারবার।
[আরও পড়ুন: কুড়িয়ে পাওয়া এটিএম কার্ডে টাকা তুলে গ্রেপ্তার স্ত্রী, অপমানে আত্মঘাতী স্বামী]
পরবর্তী সময়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নতুন সভাপতি করা হয়েছে অশোক কুমার চক্রবর্তীকে। অশোকবাবু জগন্নাথ সরকারের অনুগামী বলেই পরিচিত। যদিও নতুন সভাপতি আসার পরেই বদল করা হয় তিনটি জেলা পরিষদ মণ্ডলের সভাপতিকে। আর তাতেই তৈরি হয় বিজেপির নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের পরিবেশ। যা বিজেপির রাজ্য সভাপতির সামনে প্রকাশ্যে চলে আসে। কেন তিনটি জেলা পরিষদ মণ্ডলের সভাপতিকে বদল করা হয়েছে, তা নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতির সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেতা এবং কর্মীরা। অবশ্য শেষপর্যন্ত বিজেপি নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, ‘মণ্ডলের কয়েকজন সভাপতি বদল করার জন্য কয়েকজনের মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পরিবর্তন হলে কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। হয়ত কারও কারও পছন্দ হয়নি। আগামী দিনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
The post মণ্ডল সভাপতি বদল ঘিরে চূড়ান্ত উত্তেজনা, দিলীপ ঘোষের সামনেই অন্তর্দ্বন্দ্ব বিজেপি কর্মীদের appeared first on Sangbad Pratidin.
