এসআইআরের জন্য যাচাই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ লোককে যাচাই করে আসল মানুষটাকে কি খুঁজে পাওয়া যাবে শেষ পর্যন্ত?
রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গেল যাচাই পর্ব। এই যাচাই-পদ্ধতি মোটামুটি পাঁচটি স্তরে বিস্তৃত। শুনানি কেন্দ্রে ভোটারের ছবি তুলে সেই ছবির সঙ্গে নেওয়া হবে স্বাক্ষর। এরপর ছবি ও সই মিলিয়ে দেখা হবে কমিশনের পোর্টালে আপলোড করে। যেখানে ইতিমধে্য ভোটারের সমস্ত নথি আপলোড করা হয়েছে। চতুর্থ পদক্ষেপে এইসব কিছু পৌঁছবে জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে। এবং পঞ্চম পর্বে তিনি পাঁচদিনের মধ্যে তা যাচাই করে রিপোর্ট দেবেন কমিশনকে। শুনতে বেশ লাগে, কিন্তু চাপটা বুঝতে পারছেন? শুধু কাজের চাপ নয়। অন্য আরও এক বৃহত্তর চোরা চাপও আছে! প্রথম চাপ, কোনও ভোটার ভুয়া তথ্য দাখিল করলে জরিমানা, এমনকী জেল পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া, যেহেতু শুনানিতে ভোটারদের জমা দেওয়া নথি যাচাই করার পরে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা ফাইনাল যাচাইয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন জেলাশাসককে, সরাসরি দায়বদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন জেলাশাসকই। চাপ যে বহুস্তরী, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এই যাচাই শেষ পর্যন্ত যে অসম্ভব, তা কি আমরা ভাবতে পারি? ভাবতে পেরেছিলেন অস্কার ওয়াইল্ড। তিনি অসামান্য ইন্টেলেকশনে লিখতে পেরেছিলেন এই মোক্ষম বাক্যটি– ‘মোস্ট পিপ্ল আর আদার পিপ্ল।’ পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই অন্য মানুষ। কেন অন্য মানুষ? কারণ তারা নিজে ভাবতে পারে না। অন্যদের ভাবনাকেই তারা নিজের ভাবনা বলে মনে করে। তাদের সমস্ত যাপন, সমস্ত বেঁচে থাকাটাই অন্য কোনও মানুষের বেঁচে থাকা, অন্য কোনও মানুষের ভাবনানুসারে জীবনকে গড়ে তোলা। অস্কার ওয়াইল্ডের ভাষায়– “দেয়ার থটস আর সামওয়ান এলসে’স ওপিনিয়নস।” সুতরাং অধিকাংশ লোককে যাচাই করে আসল মানুষটাকে,
যে-মানুষটা জানে আসলে সে কে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যে-মানুষটা সর্বদা বলেন– টাকা মাটি, মাটি টাকা, বলেন, টাকাপয়সা ছুঁলে নাকি তঁার শরীর জ্বলেপুড়ে খাক হয়, সেই আপাত মূর্খ সরল সন্ন্যাসী আসলে ভুয়া সাধক নয় তো? যাচাই করতে চাইলেন তরুণ নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি পয়সা রেখে দিলেন ওই সন্ন্যাসীর জপের আসনের তলায়। আর সেই সাধক আসনে বসা মাত্র যেন বিদু্যৎপৃষ্ঠ হলেন, ছিটকে পড়লেন সাধনাসন থেকে। সাধক শ্রীরামকৃষ্ণর মুখে ফুটে উঠল হাসি, বললেন নরেন, একবার কেন, যতবার সন্দেহ হবে, ততবার আমাকে যাচাই করবি। এ-কথাও ঠিক, যত সত্য আমরা মেনে নিয়েছি, যত অসত্য আমরা বর্জন করেছি, সব কিছুর পিছনে আছে অামাদের যাচাই। প্রশ্ন। সংশয়।
সমস্ত বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হল পরীক্ষা, যাচাই। তারপর তো সিদ্ধান্ত। বৈজ্ঞানিক সন্ধানের গোড়ার কথাই হল সংশয় ও জিজ্ঞাসা, যা পৌঁছে দেয় আমাদের নতুন নতুন সিদ্ধান্তে। জীবনে ফাইনাল ‘রাইট’ এবং ফাইনাল ‘রং’, চূড়ান্ত সঠিক এবং চূড়ান্ত ভ্রান্ত বলে কিছু নেই। জীবনের এই ‘অ্যাবসার্ডিটি’ মেনে নেওয়াটাই জীবনকে কিছুটা অন্তত জানা, বলেছিলেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ও দার্শনিক অালব্যের কামু।
