পলাশ পাত্র, তেহট্ট: বছর ঘুরে জগদ্ধাত্রী পুজো এলে আনন্দে মেতে ওঠে জলঙ্গির পারের তেহট্ট। হই হই করে কাটে চারটে দিন। নগর জীবন থেকে অনেক দূরের এই জনপদে আনন্দের সুর নিয়ে আসে দেবী জগদ্ধাত্রী। তবে এই আনন্দের উদযাপনও খুব বেশি পুরনো নয়। ১৯ বছর আগে স্থানীয় সেমনেন্স বয়েজ ক্লাবের উদ্যোগেই প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়েছিল তেহট্টে। এখানে দেবী জগদ্ধাত্রী বুড়িমার পুজো হিসেবেই খ্যাতি লাভ করেছে। এরপর দিন যত এগিয়েছে ততই জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেমনেন্সের বুড়িমা। তেহট্টের বাসিন্দারা জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দকে আপন করে নিয়েছেন। সেমনেন্সের অনুপ্রেরণায় তেহট্টে বেড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা। বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৯০টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয় এখানে।
ফিরে আসি বুড়িমার পুজোর কথায়। এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে গল্প। ২০০০ সালের আগে তেহট্টের কোথাও কোনও জগদ্ধাত্রী পুজো হত না। এদিকে পার্শ্ববর্তী শহর কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জনপ্রিয়তা তখন জেলাজুড়ে। তেহট্টের বাসিন্দারাও প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় কৃষ্ণনগরে গিয়ে এই উৎসবে শামিল হতেন। ১৯৯৯-তে প্রতিবেশীদের দেখাদেখি বন্ধুর আমন্ত্রণে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে গিয়েছিলেন জিৎপুরের প্রশান্ত মণ্ডল, বিদ্যুৎ মল্লিক, ববি বিশ্বাস। দিনদুয়েক সেখানে থাকার পর আনন্দের মুহূর্তকে হৃদয়বন্দি করে তেহট্টে ফিরে আসেন ওই যুবকের দল। কৃষ্ণনগরে পুজো দেখে খুব খুশি হন তাঁরা। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, পরের বছর দেবী জগদ্ধাত্রী আসবেন তেহট্টে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। পুজো করতে গেলে তো ক্লাব লাগবে। তাই পুজোর আনন্দে জিৎপুরের যুবকরা তৈরি করে ফেললেন নতুন ক্লাব সেমনেন্স বয়েজ। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকেই সেই ক্লাবে সদস্যরা জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন। দেখতে দেখতে ১৮টি বছর পার করে এবার উনিশে পড়ল সেমনেন্স ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো। সূচনার কয়েক বছরের মধ্যেই বুড়িমার পুজো হিসেবে নজর কেড়ে নেয় সেমনেন্সের দেবী জগদ্ধাত্রী। এবছর চারদিনের বুড়িমার পুজোয় সাবেকিয়ানাকেই পাখির চোখ করেছে সেমনেন্স বয়েজ। নবমীতেও বুড়িমার পুজো দেখতে দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে তেহট্টের জিৎপুরে। সাবেকিয়ানার পাশাপাশি এখানকার মূল আকর্ষণ শোভাযাত্রা। তাতে সাম্প্রতিক বিষয়ের ট্যাবলো থেকে শুরু করে ছৌ-নাচ, রণপা, ভাংড়া নাচেরও আয়োজন রয়েছে।
[রহিম ভাইয়ের হাতে তৈরি প্রতিমার কাঠামো, সম্প্রীতির মেলবন্ধন জগদ্ধাত্রী পুজোয়়়]
আদিবাসীদের মাতৃ বন্দনাকে থিম করে ইতিমধ্যেই দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে বর্গিডাঙা পাড়ার যুব সংঘ। চারদিনের পুজোতে জগদ্ধাত্রী এখানে সাবেকি সাজে বর্তমান। ডাকের সাজেই মাকে সাজানো হয়েছে। প্রতিমার পাশেই থিমের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে তৈরি হয়েছে গুহা। সেই গুহাতেই রয়েছেন আদিবাসীদের দেবী। আর গুহার বাইরে রাখা হয়েছে দীর্ঘ ক্যানভাস। যেখানে ফুটে উঠেছে আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি। শুধু বর্গিপাড়া বা সেমনেন্স ক্লাব নয়, জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে তেহট্টের অন্যান্য মণ্ডপেও চোখে পড়ার মতো দর্শনার্থীদের ভিড়। নবমীর রাতে সেই ভিড় আরও বাড়বে, এমনটাই আশা করছেন পুজো উদ্যোক্তারা। এই চারদিনে আপাত শান্ত জলঙ্গির তীর লাগোয়া তেহট্ট যেন আলোর মালায় ঝলমলিয়ে ওঠে।
[থিমের লড়াইয়ে জমজমাট জগদ্ধাত্রী পুজো, অষ্টমীতে জনজোয়ার চন্দননগরে]
The post এইভাবেই ১৯ বছর আগে তেহট্টে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো appeared first on Sangbad Pratidin.
