শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সরকারি কর্মীর পর এবার স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের৷ প্রশাসনকে জানিয়ে কাজ না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানান জলপাইগুড়ি বিদ্যুৎ দাশগুপ্ত৷ পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সমস্যা সমাধান হওয়ার পর মৃত্যুর আর্জি নিজে থেকে তুলে নেন ওই যুবক৷
কিন্তু, কেন স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানাতে বাধ্য হন ওই যুবক? জলপাইগুড়ি শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কেরানিপাড়ার বাসিন্দা বিদ্যুৎ দাশগুপ্তের দাবি, দিনরাত তাঁকে কটূক্তি করেন প্রতিবেশীরা৷ পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, বিদ্যুৎ অরুণাচল প্রদেশে একটি নির্মাণ সংস্থায় অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন৷ কিন্তু মাঝপথেই চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন তিনি৷
পরিবারের দাবি, তারপর থেকেই খানিকটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয় আপাতশান্ত এই মানুষটির৷ প্রতিবেশীরা তাঁকে নিয়ে কটূক্তি করছে বলে মনে হতে থাকে তাঁর৷ আর এই মানসিক বিকৃতি দূর করতে স্থানীয় এক মনোবিদকেও দেখান পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু, শব্দগুলি পিছু ছাড়ছিল না ওই যুবকের৷ এরপর সিকিমে কিছুদিন কাজ করে ফের বাড়িতে ফিরে আসেন৷ বর্তমানে শিলিগুড়ি’র একটি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্তব্যরত বিদ্যুৎবাবু৷ কিন্তু আসা যাওয়ার পথে সেই প্রতিবেশীদের বিদ্রূপ কটূক্তি এখনও নাকি তাড়া করছে তাঁকে৷ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে একাধিকবার পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নবান্নে চিঠি পাঠান বিদ্যুৎবাবু৷
চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘এলাকার কিছু মানুষ ২৪ ঘণ্টা আমার উপর নানা ধরনের কটূক্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। তাঁরা কী দিয়ে আমাকে দেখে তা আমি আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি। কিন্তু যন্ত্রের মতো তাঁরা আমাকে নানা রকম শারীরিক অত্যাচার চালিয়ে থাকে৷ আমার জীবনযাত্রা ওদের হাতে খেলার পুতুলের মতো হয়ে গিয়েছে৷ সেই কারণে আমি আর বাঁচতে চাইনা৷ আপনি আমাকে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরন করার অধিকার দেন৷ আমি আপনার উপর চিরকৃতজ্ঞ থাকব৷’’ সূত্রের খবর, এই চিঠি হাতে পেয়েই জলপাইগুড়ির পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই কোতয়ালি থানার পুলিশের একটি দল বিদ্যুৎবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন৷ আলাদা করে বিদ্যুৎবাবুর বক্তব্য শোনেন৷ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাসও দেন৷
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত বিদ্যুৎবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ নেওয়ায় স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপে খুশি বিদ্যুতের দাদা প্রদ্যুৎ দাশগুপ্ত জানান, প্রতিবেশীদের নিয়ে তাঁদের কোন অভিযোগ নেই৷ তাঁরা চিন্তিত ভাইকে নিয়ে। চিকিৎসা করাতে চাইলেও সেক্ষেত্রেও আপত্তি ভাইয়ের৷ তবে, এই পরিস্থিতিতে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চান না তাঁরা। ভাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলাই এখন তাঁদের লক্ষ্য৷
The post কটূক্তি করছে প্রতিবেশীরা, স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি ইঞ্জিনিয়ারের appeared first on Sangbad Pratidin.
