shono
Advertisement

পুরুলিয়ায় তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার ডাক, কুড়মি ভোট কোন দিকে?

কেন এই সিদ্ধান্ত কুড়মিদের?
Posted: 07:39 PM May 29, 2023Updated: 07:39 PM May 29, 2023

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শাসকদল তৃণমূলকে (TMC) একটি ভোটও নয়! ‘কুড়মি কুড়মালি জনজাগরণ জড়ুআহি ও পদযাত্রা’ করে জনসমক্ষে এই কথা তুলে ধরছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। গত এপ্রিল মাসে আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার দাবিতে রেল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নেওয়ার পর আদিবাসী কুড়মি সমাজ প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এবার তাঁরা পথে নামবেন। শাসকদলকে ভোট দেবে না আদিবাসী কুড়মি সমাজ। ওই ঘোষণা মতো এবার কুড়মি জনজাতি মানুষজনদের কাছে প্রচার করতে ‘কুড়মি কুড়মালি জনজাগরণ জুড়ুআহি ও পদযাত্রা’র কর্মসূচি নিয়েছে।

Advertisement

সমগ্র জঙ্গলমহল জুড়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজ বিভিন্ন ব্লক নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে গ্রাম কমিটির উদ্যোগে একদিনে একাধিক গ্রামে পদযাত্রা করে একটি জায়গায় জমায়েত হয়ে কুড়মি জনজাতির মানুষজনদের কাছে বার্তা রাখছে, তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার জন্য। তাহলে কুড়মি অধ্যুষিত জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় কুড়মি জনজাতিদের ভোট যাবে কোন দিকে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বনমহল পুরুলিয়ায়। এই নিয়ে যেমন নানান কাটাছেঁড়া চলছে জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। তেমনই চলছে নানান জল্পনা। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন,” শাসকদল তৃণমূলকে একটা ভোটও নয়। এই বিষয়ে গ্রামে গ্রামে কুড়মি জনজাতির মানুষজনের মধ্যে আমরা প্রচার শুরু করেছি।”

[আরও পড়ুন: পয়লা জুন থেকেই বদলাচ্ছে কলকাতা মেট্রোর এই নিয়মটি, জেনে নিন খুঁটিনাটি]

কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত কুড়মিদের? আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার দাবিতে আদিবাসী কুড়মি সমাজ ২০১৬ সাল থেকে পুরুলিয়া জেলা-সহ জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে আন্দোলন করছে। তবে এই সামাজিক সংগঠন সবচেয়ে শক্তিশালী বনমহল পুরুলিয়ায়। আটের দশক থেকে এই আদিবাসী কুড়মি সমাজ সংগঠন থাকলেও এখন প্রথম সারির নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাঁরা আগে পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজে ছিলেন। জঙ্গলমহলে প্রচার রয়েছে, এই পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ খানিকটা শাসকদল তৃণমূলের দিকে রয়েছে। পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলের চার জেলায় মোটামুটিভাবে কুড়মিদের সাতটি সংগঠন কাজ করছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজ ছাড়াও সেই সংগঠনগুলি হল ‘কুড়মি সমাজ, পশ্চিমবঙ্গ,’ ‘কুড়মি সেনা’, ‘আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজ’, ‘হামরা ৮১ গুষ্ঠীর আগদেহলি।’ এই চারটি সংগঠন মিলে ‘ ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি’ তৈরি করেছে। বাকি দুটি সংগঠন হল পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ, নেগাচারি আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এই সমস্ত সংগঠনগুলোর দাবি এক, তাদের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেই কারণে আন্দোলন চলছে। তবে আন্দোলনের পদ্ধতি-সহ আরও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, রাজ্য সরকার কমেন্ট – জাস্টিফিকেশন গত ছ’বছর ধরে পাঠাতে চাইছে না। কিন্তু কুড়মি সংগঠনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রক একাধিক সুনির্দিষ্ট মাপকাঠির ভিত্তিতে ২০১৭ সালে রাজ্যের কাছে কমেন্ট-জাস্টিফিকেশন চেয়েছিল সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট )-র রিপোর্টের উপর। কিন্তু এই সংগঠনগুলির অভিযোগ, ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যে কমেন্ট-জাস্টিফিকেশন রাজ্য পাঠায় তা পুরনো বলে অভিযোগ।

 

[আরও পড়ুন: বাড়িতে ঢুকে পড়ায় সারমেয়কে হাঁসুয়ার কোপ! প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে থানায় পোষ্যমালিক]

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ওই কমেন্ট-জাস্টিফিকেশন কুড়মিদের পছন্দসই হচ্ছে না। তারা চাইছেন, ওই কমেন্ট- জাস্টিফিকেশনে লেখা হোক, কুড়মিরা এখনও মানুষজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন । তারা সমাজের মূল স্রোতে আসতে ভয় পান । কিন্তু রাজ্যের জঙ্গলমহল সহ বাকি জেলাগুলিতে থাকা কুড়মি জনজাতিদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন নয়। ২০০৪ সালে ঝাড়খন্ড সরকার কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে ২০১৪ সালেও কেন্দ্রের কাছে দরবার করে ঝাড়খন্ড সরকার। ২০১৫-তে তা ফিরিয়ে দেয় কেন্দ্র।

কিন্তু পুরুলিয়া-সহ বাকি জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতেও তাদের দাবি নিয়ে তারা অনড়। জঙ্গলমহলের জেলাগুলির মধ্যে পুরুলিয়ায় কুড়মি জনজাতির মানুষজন সবচেয়ে বেশি রয়েছেন। ২০২১ সালের ভোটার তালিকার নিরিখে এই জেলায় ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণির ভোটার রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। যার মধ্যে কুড়মি ভোটার প্রায় ৩৫ শতাংশ। পুরুলিয়া লোকসভার নিরিখে অনগ্রসর শ্রেণির ভোটার রয়েছেন ৬১ শতাংশ। তার মধ্যে কুড়মি জনজাতির ভোট ৩৬ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি।

এই বিপুল অংশ ভোট যদি শাসক দলের পক্ষে না পড়ে তাহলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভায় এই জেলায় তৃণমূল যে সমস্যায় পড়বে তা একেবারে পরিষ্কার। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে কুড়মি জনজাতির ভোট শাসকদল সেভাবে পায়নি। ওই দুই নির্বাচনেই শাসকদলের ভরাডুবি হয়েছিল জঙ্গলমহলের এই জেলায়। তবে বিধানসভা ভোটে এই জেলায় কুড়মি ভোট কিছু পেয়েছিল শাসক দল। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “কুড়মি জনজাতির মানুষজন বরাবর আমাদের পক্ষে রয়েছেন। এখন যা চলছে তার পিছনে বিজেপির উসকানি রয়েছে। বিজেপির মদত আছে। বিজেপির এই উসকানির বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন,”একসময় সামাজিক সংগঠনগুলিকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেছিল তৃণমূল। এখন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারছে না। তাই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। অযথা বিজেপিকে টেনে আনা ছাড়া আর তাদের কাছে এখন কোন পথ নেই। জঙ্গলমহলের সাধারণ মানুষ তা বুঝে গিয়েছেন । এর ফল ভোটে পড়বে।”

তাহলে কী কুড়মি ভোট বিজেপিতে যাবে? বিশ্লেষকদের কথায়, এই ভোট গেরুয়া শিবিরে না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।কারন আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। সবচেয়ে বড় ভূমিকা কেন্দ্রের রয়েছে। তাছাড়া যেভাবে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কুকথার বিরুদ্ধে আদিবাসী কুড়মি সমাজ বিজেপির ওই নেতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে তাঁর বাংলো ভাঙচুর করল তাতে ওই ভোট গেরুয়া শিবিরের পড়ার অবস্থাতে নেই। রাজনৈতিক মহলের একটি সূত্র বলছে, বনমহলের এই জেলার কুড়মি জনজাতির ভোট এবার কংগ্রেসের পক্ষে পড়তে পারে। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে যে রিপোর্ট উঠে আসছে, তাতে কংগ্রেসের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া চলছে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement