শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: সময় পেরিয়েছে নিজের নিয়মে। কিন্তু আজও জঙ্গিপুরের ঘোষাল বাড়িতে শিকলে বেঁধে রেখে পুজো করা হয় দেবী দুর্গাকে। জানেন এই অদ্ভুত নিয়ম?
আনুমানিক ৪৫০ বছর আগে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) শুরু হয় জঙ্গিপুরের (Jangipur) ঘোষাল বাড়িতে। তবে শুরুটা করেছিলেন গয়ামুনি বৈষ্ণবী। জঙ্গিপুর বাবুবাজারের গয়ামুণি বৈষ্ণবীর দুর্গাপুজোই গোঁসাই বাড়ির পুজো বলে খ্যাত ছিল। পরে সেই পুজো 'ঘোষাল বাড়ির পুজো' বলে পরিচিতি লাভ করে। এই পুজোয় রয়েছে বিশেষত্ব। পঞ্চমীর দিন দেবীদুর্গাকে তোলা হয় বেদীতে। তারপর পিছন থেকে বড় লোহার শিকল বেঁধে ফেলা হয় প্রতিমা।ঘোষাল পরিবারের বর্তমান সদস্য গৌতম ঘোষাল নিজেই জানান এর কারণ।
[আরও পড়ুন: মদ্যপানের আসরে বচসা, নলি কেটে খুন করে গঙ্গার পাড়ে যুবকের দেহ পুঁতল বন্ধুরা, আতঙ্ক পানিহাটিতে]
তাঁর কথায়, "সন্ধিপুজোর সময় দেবী জীবন্ত হয়ে ওঠেন। আস্তে আস্তে দেবী সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। দেবী যাতে ঘোষাল বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে না পারেন, তার জন্যই শিকল বেঁধে রাখা হত। সেই রীতি মেনে এখনও পুজো হয়ে চলেছে।" জানা গিয়েছে, অন্যবারের মতোই প্রথা মেনে এবছরও রথের দিন দেবীর কাঠামোতে প্রলেপ দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। মহালয়ার দিন মন্দিরে দেবীকে স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন ঢাক, ঢোল, বাজিয়ে নবপত্রিকাকে পালকি করে আনা হয় ভাগীরথী নদীতে। বৈদিক মতে স্নান করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন ফল, লুচি, মিষ্টি-সহ ভোগ নিবেদন করা হয়।
সন্ধিপুজোতে তিন রকমের খিঁচুড়ি, পোলাও, পনির ও বক ফুলের বড়া ভোগ হিসাবে দেবীকে নিবেদন করা হয়। দশমীতে দেবীকে ইলিশ মাছের ভোগ নিবেদন করা হয়। যদিও তা মন্দিরে তোলা হয় না। পুজোর ক'টা দিন ঘোষাল বাড়ির দেবী দুর্গার চারধারে হরেক রকম প্রজাপতির আগমন ঘটে। দশমীতে দেবীর বিসর্জনের পর প্রজাপতিদের আর দেখা মেলে না। পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, পুজোর কটাদিন মা দুর্গা তাঁদের মন্দিরে থাকেন। প্রসঙ্গত, ঘোষাল বাড়ির দেবী দুর্গা আজও এক চালাতে বিরাজমান। দেবীর হাতে থাকে পিতলের সমস্ত অস্ত্র। বনকাপাশি ঢাকের সাজ। পুজোর ক'টা দিন ঘরের সমস্ত পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে ছোট ছোট শিশুরা আনন্দে মেতে উঠে ঘোষাল বাড়ির পুজোতে।