সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দোল পূর্ণিমায় রঙের উৎসবে মাতোয়ারা গোটা রাজ্য। তবে ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও ব্যতিক্রমীদের তালিকাতেই থাকল বর্ধমান শহর। সোমবার এই শহরকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না দোল উৎসব। সরকারিভাবে স্কুল, কলেজ, অফিস–কাছারি ছুটি থাকায় রাস্তাঘাট তুলনায় ফাঁকা ছিল। তবে জনজীবন আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক। অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার। না, এবারই প্রথম নয়, গত প্রায় দু’শো বছর ধরেই এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে চলছে এই শহর। দোল পূর্ণিমার দিন শহরবাসী রঙের উৎসবে মাতেন না। এদিন শুধুমাত্র রাজার দেব–দেবীরা দোল খেলেন। পরদিন রঙের উৎসব পালন করেন শহরবাসী। আগে রাজারাও পরদিনই রং খেলতেন।
ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন, বর্ধমানের রাজারা ছিলেন অবাঙালি। তাঁদের কাছে রঙের উৎসব হোলি। যা দোল পূর্ণিমার পরেরদিন পালিত হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বর্ধমানে রাজ আমলে রাজারা হোলির দিন রং খেলতেন। স্বাভাবিক নিয়মে রাজার আগে প্রজারাই বা কীভাবে রং খেলবেন। তাই শহরবাসীও হোলির দিন রং খেলতেন। আবার ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, বর্ধমান রাজ পরিবার অনেক দেব–দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেখানে রাজারা দোল পূর্ণিমায় দেব–দেবীকে আবির দিতেন। রাজ পরিবারের দেবদেবী যেহেতু দোল পূর্ণিমায় রং মাখতেন তাই রাজা বা প্রজারা কেউ আর সেইদিন রং খেলতেন না। তাঁরা সকলে পরদিন রঙের উৎসব মেতে উঠতেন।ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, সম্ভবত বর্ধমানের মহারাজ মহতাব চাঁদ ১৮৫০ সালে এই প্রথার প্রচলন করেছিলেন। আর সেই প্রথা আজও মেনে চলেছে শহর বর্ধমান।
[আরও পড়ুন: দোলের দিন মাঝগঙ্গায় নৌকাডুবি, নিখোঁজ নৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া ১ তরুণী]
রাজ আমলের বিলোপ হয়েছে। সেই রাজাও নেই, রাজ আমলও নেই। কিন্তু প্রচলিত ধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন শহরবাসী। সোমবার রাজ পরিবারের লক্ষ্মী–নারায়ণ জিউ মন্দির, রাধা–মাধব জিউ মন্দিরে দোল পূর্ণিমা পালন করা হয়। বিশেষ পুজো হয় মন্দিরে। এদিন শহরবাসীদের অনেকেই ভিড় করেছিলেন মন্দিরে। পুজো দিয়েছেন। আবির দিয়েছেন দেব–দেবীর পায়ে। লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দিরের পুরোহিত সুমন কিশোর মিশ্র, উত্তম মিশ্ররা জানান, বর্ধমান শহরে এটাই রীতি। দোল পূর্ণিমায় রাজ পরিবারের দেব–দেবীকে আবির দেওয়া হয়। সেদিন শহরবাসী কেউ আর রং খেলেন না। দেবতাকেই রং উৎসর্গ করেন। পরদিন সকলে রং খেলবেন।
দেখুন ভিডিও:
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
The post রাজ পরিবারের প্রথা, ঐতিহ্য মেনে দোলে আজও বেরঙিন বর্ধমান শহর appeared first on Sangbad Pratidin.
