shono
Advertisement
Lok Sabha 2024

ভোটে কী এসে যায়! নির্বাচনের মুখেও নির্লিপ্ত গোঘাটের এই গ্রামের বাসিন্দারা

কী বলছেন গ্রামের বাসিন্দারা?
Published By: Tiyasha SarkarPosted: 04:49 PM May 19, 2024Updated: 04:49 PM May 19, 2024

নব্যেন্দু হাজরা: আমরা হলাম গিয়ে বরযাত্রী। যে বর হবে, আমরা তাঁর হয়েই বরযাত্রী যাব! কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। ভোটের কথা উঠতেই জবাবটা ছিটকে এল গোঘাটের (Goghat) পান্ডুগ্রামের তস‌্য পাড়ার ষাট ছুঁইছুঁই এক মহিলার মুখ থেকে। বুঝিয়ে দিলেন কাকে ভোট দেবেন তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে ভোট নিয়ে কোনও উত্তেজনাই নেই তাঁর। 

Advertisement

গোঘাটের এই গ্রামের এলাকায় বেশিরভাগই কাঁচা বাড়ি। পাকা রাস্তা, ল‌্যাম্পপোষ্টে আলো থাকলেও জীবনে সেভাবে আলো আসেনি বাসিন্দাদের। ঠা ঠা রোদে গাছতলায় বসে কঞ্চি দিয়ে ঝুড়ি বানাচ্ছিলেন বন্দনাদেবী। ঘর থেকে কিছুটা দূরে স্বচ্ছ ভারত মিশনের ছাপ মারা শৌচালয় থাকলেও তার দরজা নেই। ভোটের কথা উঠতেই তাঁর সটাং জবাব, ‘‘ভোট আসলে কীই বা আসে যায়! যে বর হয়, আমরা তাঁর বরযাত্রী হই। ভোটের দিন যাব। যদি সুযোগ পাই দেব। কোনও ঝামেলায় আমরা নেই। যে আমলে যারা থাকে, আমরাও সেই দলে থাকি।’’

[আরও পড়ুন: ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষকতা! বাগুইআটির নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ]

চমকাইতলা থেকে এই এলাকার দূরত্ব ১০-১২ কিলোমিটার। বাম জামানার সন্ত্রাসের দিনগুলোর কথা মনে পড়তেই এখনও শিঁউড়ে ওঠেন বাসিন্দারা। মূলত চাষবাসই এখানকার মানুষের জীবিকা। ধান, আলু। আর বাড়ির মহিলারা ছোটোখাটো কাজকর্ম করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, "আগে তো ভোট এলেই আতঙ্কে থাকতাম। সিপিএমের হার্মাদরা গ্রামে গ্রামে অত‌্যাচার চালাতো। গাছের ডাল কেটে ফেলে রাখতো রাস্তায়। যাতে পুলিশ, না ঢুকতে না পারে। জখম লোককেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা থাকতো না। পুরো অপারেশন হত চমকাইতলা থেকে। শুধু এখানে নয়, খানাকুলের তৃণমূল কর্মী যুধিষ্ঠীর দলুইয়ের চোখ উপড়ে নেওয়া, গোঘাটের বেঙ্গাই এলাকায় করাতকলে ল‌্যারকা পাত্রের মাথা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের হার্মাদদের বিরুদ্ধে।"

পান্ডুগ্রামেরই বাসিন্দা কার্তিক মাঝি যেমন বললেন, ‘‘সেসব দিন কেউ ভোলেনি। এখন প্রচার বলতে লোকাল নেতারা এসে ভোটের কথা বলে গিয়েছে। যাব ভোটের দিন ভোট দিতে। তবে এখন আগের মতো আর অশান্তি হয় না।'' স্থানীয় লোকজনের কথায়, আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের বাবুরামপুর, মামদপুর এইসব এলাকাগুলো একসময় সিপিএমের হার্মাদদের স্বর্গরাজ‌্য ছিল। বিরোধী দল করার কোনও অধিকার যেন ছিল না এখানে। সেইসব এলাকাতেই এখন সিপিএমের পতাকা খুঁজে পাওয়া দায়। মামুদপুরের এক বাসিন্দা যেমন বললেন, লড়াই এখন তৃণমূল আর বিজেপি-র। লালপার্টির লোক সেভাবে প্রচার করছে কই। ওখানে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা।

[আরও পড়ুন: সুন্দরবনে গুলির লড়াই, চোরাশিকারীদের গুলিতে খুন বনকর্মী]

গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়া, হরিপাল, আরামবাগ এইসব এলাকাগুলো বাম জামানায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণেই শিরোনামে উঠে এসেছিল। সাধারণ মানুষ ভোট এলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন। তবে আপাতভাবে সেইসব জায়গাগুলোতে সেই আতঙ্ক এখন আর নেই। নির্বাচন ঘিরে খুব যে আগ্রহ রয়েছে, তাও তাঁদের কথায় প্রকাশ পেল না। গোঘাটের বায়েড়াশোলের এক বাসিন্দা যেমন বললেন, কেন্দ্র আবাসের ঘরের টাকা না দেওয়ায় ঘর পাইনি। মাথার উপর ছাদ নেই। আর ভোটের কথা ভেবে করব কি!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • গোঘাটের এই গ্রামের এলাকায় বেশিরভাগই কাঁচা বাড়ি। পাকা রাস্তা, ল‌্যাম্পপোষ্টে আলো থাকলেও জীবনে সেভাবে আলো আসেনি বাসিন্দাদের।
  • ভোট নিয়ে তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ ভোট আসলে কীই বা আসে যায়! যে বর হয়, আমরা তাঁর বরযাত্রী হই। ভোটের দিন যাব। যদি সুযোগ পাই দেব। কোনও ঝামেলায় আমরা নেই। যে আমলে যারা থাকে, আমরাও সেই দলে থাকি।’’
Advertisement