বাবুল হক, মালদহ: নিজের 'জীবিত স্ত্রী'র মুখাগ্নি! তারপর মাথা কামালেন স্বামী। সৎকারের পর পারলৌকিক ক্রিয়াও সারলেন রীতি রেওয়াজ মেনে। সেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পাত পেরে ভূরিভোজ সারল গোটা গ্রাম। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। কিন্তু কেন এমন কাণ্ড?

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের পরাশটলা গ্রামের বাসিন্দা অচিন্ত্য রায়। পেশায় রাজমিস্ত্রি। ১৯ বছরের দাম্পত্য। তবে নিঃসন্তান ছিলেন দম্পতি। একসঙ্গে উনিশটা বসন্ত কাটানোর পর প্রেমিকের হাত ধরে সেই স্ত্রী পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। সন্তান না হওয়াকেই 'অজুহাত' করে তিনি প্রেমিকের হাত ধরেন বলে স্বামীর দাবি। শুধু একা পালিয়েছেন তা নয়, নিয়ে গিয়েছেন স্বামীর গোটা জীবনের পুঁজি, গয়না থেকে নগদ, সবই। পালিয়ে যাওয়ার পর সেই প্রেমিকের সঙ্গে রিলস বানিয়ে ফেসবুকে স্বামীকে ট্যাগ করেন। এমনকি, স্বামীর হোয়াটসঅ্যাপেও রিলস শেয়ারও করেন। এতেই খেপে যান অচিন্ত্য। নিজের ও পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তারই 'বদলা' নিতে স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ওই রাজমিস্ত্রি।
প্রথমে স্ত্রীর কুশপুতুল বানিয়ে তা কাঁধে নিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে শ্মশানে যান। সঙ্গে ছিলেন শ্মশান বন্ধুরাও। সেখানে নিয়ম মেনে মুখাগ্নি সারেন। এরপর মস্তক মুণ্ডনও করেন। সারেন শ্রাদ্ধশান্তিও। মঙ্গলবার হিন্দু রীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন অচিন্ত্য। পুরোহিত দর্পণও হয়। পেটপুরে খাওয়া-দাওয়া করেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
গোটা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে যাতে গ্রামে এ ধরনের আর কোনও ঘটনা না ঘটে তাই এই কাজ। পরিবারের এক সদস্য আশালতা রায় জানিয়েছেন, "আমাদের বাড়ির বউ প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে। তাই আমরা তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। গ্রামে যাতে আর এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে তারই বার্তা দিয়েছি।"
স্বামী অচিন্ত্য রায় বলেন,"পরিবারে কোনও অশান্তি ছিল না। তবে সন্তান না হওয়ার একটা দুঃখ ছিল। কাজ করে যা ইনকাম করতাম সমস্তটাই স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা রাখতাম। স্ত্রী গভীর রাতে ফোনে কথা বলত। আমি অনেক শাসন করেছিলাম। শ্বশুরবাড়িতেও জানিয়েছিলাম।" তিনি আরও বলেন, "এদিন আমি কাজ করতে বাইরে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখি স্ত্রী বাড়িতে নেই। সমস্ত নতুন কাপড়চোপড়,বিয়ের গয়না ও বন্ধন ব্যাঙ্কের চল্লিশ হাজার টাকা-সহ আমার জীবনের সমস্ত আয় নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। এরপর প্রেমিকের সঙ্গে ফেসবুকে রিলস তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আমাকে জানানোর চেষ্টা করে।" এরপরই স্ত্রীর শ্রাদ্ধশান্তির সিদ্ধান্ত নেন রাজমিস্ত্রি স্বামী।