গৌতম ব্রহ্ম ও সুমিত বিশ্বাস: বনকর্মীদের ৯ দিনের চেষ্টায় জালবন্দি হয়েছিল জিনাত। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেসকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে ওড়িশা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ফের বাংলার সীমানার কাছাকাছি আরও একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এবার তাকে উদ্ধারের জন্য ওড়িশা প্রশাসনের কাছে বিশেষ অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অবিলম্বে দক্ষ বনকর্মী পাঠিয়ে বাঘকে উদ্ধারের কথা বললেন তিনি।
ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ সূত্রে খবর, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি জঙ্গল বদল করেছে। সরাইখেলা খাটোয়া জেলার চাণ্ডিল থানার বালিডি জঙ্গলে আগে ছিল বাঘটি। সোমবার ভোরে দলমা পাহাড়ের দিকে চাষের জমিতে পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে।
দলমা পাহাড়ের দিকে বাঘের পায়ের ছাপ
ওই চাষের জমির পাশেই এনএইচ ৩৩ (রাঁচি-বুণ্ডু-চৌকা-খড়গপুর)। তার পাশে পাটা টোলপ্লাজা। প্রায় লোকালয়ের কাছে চলে এসেছে বলা যেতেই পারে। আর তার ফলে ক্রমশ বাংলায় ফের বাঘ ঢুকে পড়ার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘটি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় বা পাহাড়তলির দিকে অথবা দক্ষিণ পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দিকে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যে পথে দলমামুখী হয়েছে
বাঘটির রেডিও কলার নেই। তাই গতিবিধি সবসময় ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, ঝাড়খণ্ড বনবিভাগের খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো দশা। ইতিমধ্যেই পালামৌ টাইগার রিজার্ভের বিশেষজ্ঞরা বাঘের গতিবিধি নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
সোমবার গঙ্গাসাগরের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলার সীমানায় বাঘের আনাগোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "এখানকার মানুষেরা একদিকে বাঘ এবং অন্যদিকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। এই দেখুন না, একটা বাঘ ৫টা জঙ্গল, ৫টা জেলা পেরল। ৫ দিন আতঙ্কে ছিল। ছোটদের স্কুল বন্ধ ছিল। যে-ই আমরা উদ্ধার করলাম, আমাদের প্রশাসন ও বনবিভাগ সকলে মিলে, ওমনি দিনরাত ফোন আসছে। ফেরত দাও। ফেরত দাও। ফেরত দাও। আর দিয়ে দিলাম।"
ওড়িশা বনদপ্তরের বিরুদ্ধে এরপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা আরও বলেন, "আবার একটা চলে এসেছে। তোমরা তো তোমাদের জঙ্গলের খেয়াল রাখবে। যাতে তোমাদের বাঘ আমাদের এখানে না ঢুকে পড়ে। আমাদের গ্রামে আতঙ্ক না ছড়ায়। এমনিতেই হাতির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। হাতি নিয়ে নানা দেশে নানা পরিকল্পনা থাকে। হাতির জন্মের হার অনেক বেশি। খাদ্য দিতে দিতে সমস্যা। ধান খেতে ভালোবাসে, চলে যাচ্ছে। রাস্তায় চলে এল। বনকর্মীদের সামলাতে হয়। ওড়িশা সরকারকে বলব, উদ্ধার করে নিয়ে যেতে। এখন আবার যদি সেই আতঙ্ক সহ্য করতে হয়। যেভাবে বনকর্মীরা বাঘ ধরেছে, তা মডেল।"
মমতা আরও বলেন, "বাঘকে পাঠালে চিরকালের জন্য পাঠান, রেখে দিচ্ছি। তোমাদের নিজেদের রাখার জায়গা নেই। নিয়ে গিয়ে জলে ছেড়ে দিলে। এটা কী হচ্ছে। আমি ওড়িশা সরকারকে দোষারোপ না করে, অনুরোধ করব। দয়া করে বনকর্মী পাঠিয়ে বাঘকে ফেরত নিয়ে যান। শুধু আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমাদের বাসিন্দারা ভোগান্তি সহ্য করবে না।" মানুষের জীবন রক্ষায় বনকর্মীদের আরও সজাগ থাকার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।