সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: তিল থেকে তাল বোধহয় একেই বলে। সামান্য একটা জুতো হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। শেষমেশ প্রাণ গেল এক ব্যক্তির।
ঘটনা উলুবেড়িয়া থানার কৈজুড়ি শা পাড়ার। এক কিশোরের জুতো হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়। যা রীতিমতো সংঘর্ষের চেহারা নেয়। এবং সেই সংঘর্ষেই মৃত্যু হয় মহম্মদ আলি শা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির। মাথায় ইট মেরে ওই ব্যক্তিকে খুন করার অভিযোগ তোলেন পরিবারের সদস্যরা। সংঘর্ষে আহত ৬। ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত সুকুর শা’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
[মুখ্যমন্ত্রীর ফর্মুলায় মন্ত্রিত্ব-মেয়রের দায়িত্ব সামলাব: ফিরহাদ]
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেদিন সকালে আজিবর শা নামে বছর তেরোর কিশোর প্রতিবেশী সুকুর শায়ের বাড়ি থেকে জরির কাজ আনতে যায়। ওই কিশোরের দাবি, বাড়ির বাইরে জুতো খুলে ভিতরে গিয়েছিল সে। বেরিয়ে এসে দেখে জুতো নেই। জুতোর খোঁজ না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় আজিবর। অভিযোগ ওঠে, আজিবরের জুতো লুকিয়ে রেখেছে সুকুর শা। এমন অভিযোগ শুনে আজিবরকে বেধড়ক মারধর শুরু করে সুকুর শা ও তাঁর দুই ভাই। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনা গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গ্রামের লোকজন একসঙ্গে বসে বিষয়টি তখনকার মতো মিটিয়ে দেন। কিন্তু তখনও যে ভিতরে-ভিতরে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল, তা টের পাওয়া গেল পরের দিন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামেরই একটি মুদিখানার দোকান থেকে আজিবরের বাবা মহম্মদ আলি শা তেল কিনতে যান। সেই সময় তাঁর উদ্দেশে সুকুর শা এবং তাঁর ভাইরা কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ । তারপরই ফের দুই পরিবারের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ইট বৃষ্টি চলতে থাকে। জখম হন দুই পক্ষের ছয়জন। অভিযোগ, সুকুর ও তাঁর বাড়ির লোকজন মহম্মদ আলি শাকে রাস্তায় ফেলে মাথায় বারবার ইটের আঘাত করতে থাকে। গুরুতর জখম হন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মহম্মদ আলি শা-কে নিয়ে যান উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতায় স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় আজিবরের বাবার। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ফের এলাকায় ইট বৃষ্টি শুরু হয়। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।
[সৎ মায়ের ‘মারে’ মৃত কিশোর, পুলিশের জালে অভিযুক্ত]
মৃতের শ্যালক মোমিন শা জানান তাঁর জামাইবাবু কর্মসূত্রে বাইরে থাকতেন। দু’মাস আগেই তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। শনিবার তাঁর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। মৃতের দিদি আসমা বিবি বলেন, বুধবার সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পরেও বৃহস্পতিবার ইচ্ছাকৃতভাবে ঝামেলা পাকিয়ে তাঁর ভাইকে খুন করা হল। এই ঘটনায় সুকুর শা, মিরান শা, ঈশান শা ও আঙুরা বিবির বিরুদ্ধে উলুবেড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে সুকুরকে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
The post জুতো হারানোকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র উলুবেড়িয়া, প্রাণ গেল এক ব্যক্তির appeared first on Sangbad Pratidin.
