দুলাল দে: আইএসএলের জট খোলার জন্য ফেডারেশনের তিন সদস্যের কমিটির মিটিং শুরু হবে সোমবার থেকে। যে কমিটিতে বাংলা ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্তর সঙ্গে রয়েছেন গোয়া ফুটবল সংস্থার সভাপতি কাইতানো ফার্নান্ডেজ ও কেরল ফুটবল সংস্থার সভাপতি নাভাস মিরান। হাতে সময় সাত দিন। ঠিক হয়েছে সোমবার থেকে সরকারিভাবে মিটিং শুরু করবে ফেডারেশনের এই কমিটি। কিন্তু তার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় এই কমিটির সদস্যরা মোটামুটি যা ঠিক করেছেন তা হল, দ্রুত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই মরশুমে আইএসএল করার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব তৈরি করা হবে। এই প্রস্তাবগুলি ক্লাবদের জানানো হবে। ফেডারেশনের প্রস্তাবে সম্মত হলে ক্লাবরা ফেব্রুয়ারি থেকে আইএসএল খেলবে। আর যদি ক্লাবরা রাজি না হয়, তাহলে এই মরশুমের জন্য আইএসএল মোটামুটি বিশ বাঁও জলে।
আগেই ক্লাবগুলি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক ও ফেডারেশনকে আইএসএল চালানোর জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল, যা নিয়ে শনিবার আলোচনা হয় ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভায়। ক্লাবদের প্রস্তাবের মধ্যে যেটা ফেডারেশনের সদস্যদের সবচেয়ে আপত্তির বিষয় ছিল, তা হল আজীবন চুক্তিতে আইএসএল চালানোর জন্য বার্ষিক ১০ কোটি টাকা করে দেবে ক্লাবগুলি। সঙ্গে আরও একাধিক প্রস্তাব। আইএফএ সচিবই প্রথম আপত্তি তুলে বলেন, "এখনও ফেডারেশনকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আবার ৫০ বছর পরেও ফেডারেশনকে সেই ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে, এটা কিছুতেই মানা সম্ভব নয়। তাছাড়া ক্লাবগুলির হাতে লিগ ছেড়ে দিলে ফেডারেশন বা রাজ্য সংস্থাগুলির কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকবে না ভারতীয় ফুটবলে।"
অনির্বাণ দত্ত আপত্তি জানানোর পর একইভাবে প্রতিবাদ করেন অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, সিকিম, ঝাড়খণ্ড সহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য। মিটিংয়ের আগের দিনই চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় ওড়িশা। শেষে বক্তব্য রাখতে উঠে ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এন হ্যারিস ক্লাবগুলির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন। ফলে ক্লাবগুলির প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। ফেডারেশন সভাপতি তখনই গড়ে দেন তিন সদস্যর কমিটি। জানানো হয়, এই কমিটি সাত দিনের মধ্যে আলোচনা করে কীভাবে আইএসএল চালানো সম্ভব, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রস্তাব আকারে দেবে।
কমিটি গঠনের পরই তিন সদস্য নিজেদের মধ্যে একদফা আলোচনাও করেন। যেখানে বেসরকারিভাবে কিছু পয়েন্ট প্রস্তাব আকারে আলোচনা হয়েছে, যা পরে সরকারিভাবে জানানো হবে। যেমন, যেহেতু ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে হবে না, তাই আইএসএলের অপারেশন খরচ বাবদ প্রত্যেকটি ক্লাবকে ১-২ কোটি টাকা দিতে হবে।
এই সংক্রান্ত আলোচনায় দেখা গিয়েছে, আইএসএল খেলার সময় প্রতিটি ক্লাব নিজেরাই হোম ম্যাচ আয়োজন করে। পাশাপাশি বিমানভাড়া থেকে শুরু করে হোটেল খরচ সবই বহন করে ক্লাবগুলি। তাই এই মরশুমে আইএসএল চালাতে গেলে দরকার হবে শুধুই প্রতিযোগিতার অপারেশন খরচ। সেই কারণেই ক্লাবগুলি থেকে টাকা নেওয়া হবে। সঙ্গে ফেডারেশনও কিছু টাকা দেবে প্রতিযোগিতা চালানোর জন্য। এরপর থাকবে ব্রডকাস্টিংয়ের বিষয়। সেটা নিয়েই আপাতত যা সমস্যা।
যদি ফেব্রুয়ারি থেকে আইএসএল তিনটে ভেন্যুতে শুরু করা যায়, তার মধ্যে আইএসএলের জন্য ব্রডকাস্ট পার্টনার পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ফেডারেশন কর্তারা। সমস্যা একটাই। সেক্ষেত্রে কোনও টিভি চ্যানেল ফেডারেশনের সম্প্রচার সত্ত্ব বাবদ কোনও টাকা নাও দিতে পারে। ফেডারেশনকেই হয়তো আইএসএলের ম্যাচ দেখানোর প্রোডাকশনের খরচ দিতে হতে পারে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ক্লাবগুলি কি এই মরশুমের জন্য ফেডারেশনের এই প্রস্তাব মেনে খেলবে? ফেডারেশন কর্তারাও সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। এরকম যদি দেখা যায়, কিছু ক্লাব খেলল, আর কিছু ক্লাব খেলল না। তাহলে যে ক্লাবগুলি খেলবে, তাদের নিয়েই এই মরশুমে আইএসএল হবে। তবে সবটাই শুধুমাত্র এই মরশুমের জন্য। কারণ, আগামী বছর সেপ্টেম্বরে নতুন করে নির্বাচন হবে ফেডারেশনে। সকলের আশা, নতুন কমিটি এসে পাকাপাকি ভাবে কোনও বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ঠিকই আইএসএল চালাবে। ততদিন পর্যন্ত আপাতত জোড়াতালি দিয়ে দেশে ফুটবল চালু করার ভাবনা।
