কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: ভোটের বলি পাঁচ। কিন্তু জখমের সংখ্যাটা চমকে দেওয়ার মতো। প্রায় হাজার। কারও মাথা ফেটেছে, কেউ গুলিবিদ্ধ, কারও পা ভেঙেছে। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিভিন্ন ব্লক হাসপাতালে ভোটের দিন গন্ডগোলে আহতদের রাখার বেড মিলছে না। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই শতাধিক আহত ভরতি। যাঁদের অনেকেই বোমা-গুলিতে জখম হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এটাই ভোটের মুর্শিদাবাদ। যেখানে তিন তৃণমূল, এক সিপিএম এবং এক কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে জেলার বেশ কিছু বুথে পুনঃনির্বাচন চাইল তৃণমুল-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। শাসকদলও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বেশ কিছু বুথে ফের ভোট চেয়ে আবেদন করেছে।
শুক্রবার রাতেই বেলডাঙার কাপাসডাঙা এলাকার তৃণমূল কর্মী বাবর আলিকে (৩২) কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। গতকাল রাতেই আবার রেজিনগরের তেঘড়ি নাজিরপুরের ইয়াসিন শেখ (৫২) নামে এক তৃণমূল কর্মীকে বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ। বোমাবাজির গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে নিহত হন ইয়াসিন। খড়গ্রাম থানার রতনপুরে তৃণমূল কর্মী সাত্তারুদ্দিন শেখকে (৫২) কুপিয়ে খুন করা হয়। পুলিশ সেজে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। ওই ঘটনার আগের দিনই রাজ্যপাল ওই গ্রামেই গিয়েছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই খুন হন তৃণমূল কর্মী। যা নিয়ে সরব হয় তৃণমূল।
অন্যদিকে লালগোলায় সিপিএম কর্মী রৌশন আলকে (৪০) বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ ওঠে। লালগোলার ময়া গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথে ভোটের লাইনে বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে চলে লাঠি-বাঁশ দিয়ে হামলা চালানো হয়। তৃণমূল ও কংগ্রেস যৌথভাবে বোমা মেরেছে বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের লোকজন। এদিকে নওদা থানার গঙ্গাধারি এলাকায় মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃদ্ধ ভোটার হাজি নিয়াকত শেখ (৬২) ভোট (Panchayat Polls 2023) দিতে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এদিন দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। জেলা পরিষদের কংগ্রেস প্রার্থী নাসিদুল শেখের কাকা ওই বৃদ্ধ। তিনি কংগ্রেস কর্মী বলে দাবি করেছেন অধীর চৌধুরী।
[আরও পড়ুন: ভালবাসার দোকান না, ‘কংগ্রেস মানে লুটের দোকান, মিথ্যের বাজার’, রাজস্থানে বললেন মোদি]
উত্তেজনার ছবি ধরা পড়ে হরিহরপাড়াতেও। হরিহরপাড়ার জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী জিল্লার রহমান-সহ পঞ্চায়েত সমিতির দুই তৃণমূল প্রার্থী মীর আলমগীর ও জয়নাল আবেদিনের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ও ইট ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হন জয়নাল আবেদিনের গাড়ি চালক। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। জ্যোতিবাবু নামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানকে বোমা মারা হয় হরিহরপাড়া থানার সদানন্দপুরে। এলাকার একটি বুথ থেকে ফেরার সময় আটকে পড়েন ৪ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ান। সেই সময় বোমা বাজি শুরু হয়। সেই বোমা লাগে ওই জওয়ানের মুখে।
সামসেরগঞ্জেও দিনভর ঝামেলা। ডোমকলের মধুরকুল এলাকায় নয়ন মণ্ডল এবং নব কুমার মণ্ডল নামে দুই কংগ্রেস কর্মী মার খেয়ে গুরুতর জখম হন। বহরমপুর ব্লকের বেশ কিছু বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে ওইসব কেন্দ্রের ব্যালট বক্সে জল ঢেলে দেয় স্থানীয়রা বলে অভিযোগ।
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। অধীর বলেন ,আশঙ্কা যা ছিল সেটাই সত্যি প্রমাণ হল। মৃত্যু মিছিল রাজ্যে। কিছু বুথে পুনর্নির্বাচন চাইছে কংগ্রেস বলে জানিয়েছেন দলের জেলা মুখপাত্র জয়ন্ত দাস। বিজেপির জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, লুঠের ভোট হয়েছে। বিজেপির মোট ১৪ জন কর্মী আহত।