সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাঁশবাগান দিয়ে ঘেরা গ্রাম। ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। কয়েকজন আদিবাসী রমণী দিনমজুরের কাজে যাওয়ার আগে রান্নার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। পুরুষদের কেউ উঠে গোয়াল থেকে গরু সবে বাইরে বের করেছেন। অধিকাংশেরই তখনও ঘুমের ঘোর কাটেনি। কাকভোরে আচমকাই দুয়ারে হাজির মন্ত্রী। আদিবাসী পুরুষ-মহিলারা ঘুমচোখেই মন্ত্রীকে দেখে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন। পূর্ব বর্ধমানের চাঁপাহাটির ঝালাপাড়ায় আদিবাসী গ্রামে গিয়ে এভাবেই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি পালন করলেন স্বপন দেবনাথ।
[আরও পড়ুন: প্রেমিকের সঙ্গে ছক কষেই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি, নরেন্দ্রপুর ধৃত মূল চক্রী]
আচমকা এমন ভিভিআইপি অতিথিকে দেখে মণিকা টুডু রান্নার প্রস্তুতির ফাঁকে বুঝতে পারছিলেন না কোথায় বসতে দেবেন মন্ত্রীকে। মন্ত্রী নিজেই একটা পিঁড়ি টেনে নিয়ে বসে পড়েন উনুনের সামনেই। একেবারে হেঁশেলে ঢুকে খোঁজ নিলেন, কেমন রয়েছেন আদিবাসী পরিবার। ৫টি ছাগল পোষার মত যে খামার তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে, তাতে উপকৃত হচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন মণিকা। রবিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-১ ব্লকের চাঁপাহাটির ঝালাপাড়ার আদিবাসীপাড়ায় গিয়ে এইভাবেই জনসংযোগ করলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প তথা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। গ্রামের প্রত্যেককে বিলি করলেন ‘দিদিকে বলো’র কার্ড। তাঁদের কোনও অভাব-অভিযোগ থাকলে কার্ডে উল্লেখিত নম্বরে ফোন করে জানাতে বললেন। পাশাপাশি, নিজেও শুনে নিলেন কতটা ভাল রয়েছেন আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা।
কয়েকটি সমস্যার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই তার সমাধান করে দেন মন্ত্রী। গ্রামের রাস্তায় বাতি নেই শুনে স্বপনবাবু জানিয়ে দিলেন, হাইমাস্ট লাইট বসিয়ে দেওয়া হবে। তাতে পুরো গ্রামটাই আলোকিত হবে। একজন জানালেন, গ্রামে টিউবওয়েল রয়েছে। কিন্তু আরও একটা হলে উপকৃত হবেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি নলকূপ তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন স্বপনবাবু। মন্ত্রী বলেন, “খুব ভোরে না এলে গ্রামের সকলের সঙ্গে দেখা হবে না। সকলে কাজে বেরিয়ে যাবেন। তাই ভোরেই চলে এসেছি। তাঁরা মন খুলে কথা বলেছেন। যেটুকু প্রয়োজনের কথা জানিয়েছেন, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।”
ছোট্ট গ্রাম ঝালাপাড়ার আদিবাসীপাড়া। প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের বসবাস। দিনমজুরিই তাঁদের মূল পেশা।বাড়তি রোজগারের ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকারের তরফে বেশ কিছু প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে গ্রামে। প্রতিটি পরিবার যাতে ৫টি করে ছাগল পুষতে পারেন, তার জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। স্বপনবাবুর নিজের দপ্তর প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের তরফে বিনামূল্যে ছাগলও দেওয়া হয়েছিল আদিবাসী পরিবারগুলিকে। তা থেকে এখন রোজগারের দিশা পেয়েছে বহু পরিবার। মোটের উপর দিনযাপন এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে থাকা এই গ্রামের বাসিন্দাদের।
[আরও পড়ুন: বাধা দুর্গম রাস্তা, সরকারি সুবিধা থেকে শত হস্ত দূরে পুরুলিয়ার এই গ্রাম]
রবিবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ খোঁজ নিয়েছেন, বাচ্চারা নিয়মিত স্কুলে যায় কি না, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়মিত খাবার মেলে কি না, পানীয় জল ঠিকমত পান কি না, প্রতি বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে কি না, সকলে ২ টাকা কেজির চাল সকলে পাচ্ছেন কি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাসিন্দারা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। নেতিবাচক যা যা বলেছেন, বাসিন্দারা সঙ্গে সঙ্গে তার সুরাহাও করে দিয়েছেন স্বপনবাবু। ফেরার পথে গ্রামের অদূরে বড় রাস্তার ধারে চায়ের ঠেকে বসে আড্ডাও দিয়েছেন মন্ত্রী। খবরের কাগজের পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতেই শুনেছেন সাধারণ মানুষের মতামত।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান।
The post শিয়রে ‘দিদিকে বলো’, ভোরে আদিবাসী পরিবারের হেঁশেলে ঢুকে জনসংযোগ মন্ত্রীর appeared first on Sangbad Pratidin.
