চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়,আসানসোল: বিদ্যার দেবীর আরাধনা, বিসর্জনে আজকাল স্কুল, কলেজেই তারস্বরে মাইক বাজিয়ে দেদার গান চলে। আর পাড়ার পুজোয় তো হবেই। কিন্তু না, এসব হইচইয়ের মাঝেই ব্যতিক্রমী ছবি আসানসোলের কুলটিতে। বিসর্জনে নাচগানা হল, তবে একেবারে নিঃশব্দে। মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝে মুহূর্তে হইহুল্লোড় বাদে সরস্বতী পুজোর বিসর্জন হয়ে গেল আনন্দের সঙ্গেই। শুধু কানের হেডফোনে বাজছিল সুপারহিট সব গান। ব্যাস, সেই তালেই নাচতে নাচতে ভাসানে গেলেন ক্লাবের সদস্যরা।
শব্দদূষণ রোধ আর অন্যের অসুবিধা না করে ভাসানের এমনই অভিনব উপায় বের করলেন আসানসোলের কুলটির এক ক্লাব সদস্যরা। সরস্বতীর বিসর্জনে কানে হেডফোন দিয়ে নাচ করলেন মিঠানি সাথী ক্লাবের সদস্যরা। সঙ্গে পোস্টার, তাতে লেখা “নিঃশব্দ বিসর্জনে – বিন্দাস আনন্দে”। আইন বাঁচিয়ে বিসর্জনের অনাবিল আনন্দে তাঁদের মাততে দেখা গেল মঙ্গলবার বিকেলে। পথচলতি মানুষ দেখেন, মাইক, বক্স, ঢাকঢোল কোথাও কিছু নেই। তবু রাস্তা দিয়ে একদল ছেলেমেয়ে নাচতে নাচতে যাচ্ছে। কেউ আবার মাঝেমধ্যে হাততালি দিচ্ছেন।আবার কেউ গেয়ে উঠছেন জনপ্রিয় গানের দু-এক কলি। এদের এমন কাণ্ডকারখানা দেখে অনেকেই ভ্রূ কুঁচকেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, রহস্যটা কী। খেয়াল করে দেখলেন, সাইকেল-ভ্যানে চেপে চলেছেন মা সরস্বতী। পিছনে নিঃশব্দে নাচ করতে করতে যাচ্ছেন জনাকয়েক যুবক-যুবতী। ক্লাব সদস্যরা জানিয়েছেন, হিন্দি রিমিক্স ‘আঁখ মারে’ কিংবা ভোজপুরি গান ‘গোরি তেরি চুনরি লাল লাল রে’ থেকে গুরু রানধাওয়ার ‘পাটোলা বানকে’- সবই বাজল, কিন্তু কাউকে বিরক্ত না করেই।
[সরস্বতী পুজোয় DJ! কলেজে হস্টেলে নর্তকীদের নিয়ে হুল্লোড় পড়ুয়াদের]
বিদ্যার দেবীর পুজোর প্রথম দিন থেকেই পড়ুয়াদের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানী মিঠানির সাথী ক্লাব। ভাসান পর্বেও সেই সাবধানতা বজায় রাখলেন সদস্যরা। সবে মাধ্যমিক শুরু হয়েছে। তাই পরীক্ষার্থীদের যাতে এতটুকুও অসুবিধা না হয়, তা ভেবেই তাঁদের এই “নিঃশব্দ বিসর্জনে – বিন্দাস আনন্দে” কর্মসূচি। বিসর্জনে যাওয়া বাংলা ডাকের সাজে সরস্বতী প্রতিমার পিছনে দেখা যায় একটি পোস্টার। যেখানে লেখা ছিল, “মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রতি আমার রইল আর্শীবাদ।” সাথী ক্লাবের এই অভিনব ভাবনা এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ক্লাবের সদস্য অয়ন চট্টরাজ, শ্রেয়া পাত্র, পল্লবী পাত্ররা বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের সময় মাইক বাজিয়ে কি আর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিরক্ত করা যায়? আবার বিসর্জনে একটু নাচগান না হলে, পুজোটাও যেন অসম্পূর্ণ লাগে। মাথা খাটিয়ে তাই অভিনব বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছেন। মাইকের বদলে নিজেদের মোবাইলে গান চালিয়ে, কানে হেডফোন গুঁজে বিসর্জনে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। সঙ্গে ছিল আবির খেলা। গোটা ব্যাপারটা পরিষ্কার হতেই যাঁরা প্রথমে হাসাহাসি করছিলেন, তাঁরাও ক্লাব সদস্যদের এই ভাবনার প্রশংসা না করে পারলেন না।
The post হেডফোনে গান-সঙ্গে নাচ, নিঃশব্দ আনন্দে সরস্বতী বিসর্জন appeared first on Sangbad Pratidin.
