সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার সোনার বিপনিতে ডাকাতির ঘটনায় ‘ক্রাইম অফ সিনে’র তথ্য ভাণ্ডার হাতে পেল পুলিশ। গত ২৯ আগস্ট পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ার ওই সোনার দোকানে ডাকাতির পর ঝাড়খণ্ডে ফিরে যাওয়ার সময় পুরুলিয়া মফস্বলের মহুদা গ্রামে একটি সেচ কুয়োতে ওই বিপনির সিসিটিভির ডিভিআর ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এই ডিভিআরের মধ্যেই আধঘন্টার বেশি অপারেশনের সমস্ত তথ্য রয়েছে। কিন্তু সেই ডাকাতির ছবি ওই ডিভিআর থেকে উদ্ধার করতে পারবে কিনা তা বুঝতে পারছে না পুলিশ। ১৫ দিন জলের তলায় থাকার পর উদ্ধার হওয়া ওই যন্ত্রাংশগুলি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে বলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ডাকাতির তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্যই দুষ্কৃতীরা সেচ কুয়োতে ফেলে ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দেয়। তবে তারা ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার আগে নিজেদের পোশাক পরিবর্তন করে। এদিন ওই কুয়ো থেকে একটি মেরুন ও অফহোয়াইট জামা ও কালো রংয়ের একটি প্যান্টও উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে একজোড়া নতুন জুতো ও গামছা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার সুদামডি থেকে ধৃত করণজিৎ সিং সিধুকে নিয়েই এই উদ্ধারকার্য চালায় এই ঘটনায় গঠিত হওয়া পুরুলিয়া জেলা পুলিশের সিট।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধৃতকে নিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। একটি সেচ কুয়ো থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ওই সোনার দোকানের ডিভিআরের অংশবিশেষও আছে।”
[আরও পড়ুন: টেমসের মতো গঙ্গার পাড় সাজাবে রাজ্য, জলে নামবে দূষণহীন আধুনিক জলযান]
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ডিভিআর থেকে ডাকাতির ‘লাইভ অপারেশন’ যদি উদ্ধার করতে পারে তাহলে বাকি দুষ্কৃতীদেরকে ধরা শুধু সহজই হবে না। এই ধরনের ডাকাতি দমন করার ক্ষেত্রেও পুলিশ অনেক কিছু বিষয় জানতে পারবে। পুলিশ হেফাজতে থাকা ধৃত করণজিৎকে এদিন মুখ ঢাকা অবস্থায় গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয়। তারপর উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র তাকে দিয়ে শনাক্ত করায় পুলিশ। শনাক্ত করে করণজিৎ পুলিশকে জানায়, সেই সময় সে বাইক নিয়ে রাস্তার ওপরেই ছিল।
বাকি সঙ্গীরা পোশাক, জুতো পরিবর্তন করে এই কুয়োতে ফেলে দেয়। সেই সঙ্গে ওই সোনার দোকানের ডিভিআরও ফেলে দিয়েছিল। কালো রঙের নতুন জুতোগুলো তার সঙ্গে থাকা সুবোধ নামে এক দুষ্কৃতীর বলে সে জানায়। তবে তার সঙ্গে থাকা সঙ্গীদের মধ্যে ওই জামাগুলো কার তা মনে করতে পারেনি। এই শনাক্ত পর্বে সে মুখ ঢাকা অবস্থাতেই গলার কাছ থেকে চশমা গলিয়ে তা চোখে দিয়ে পুলিশের সিজার লিস্টে স্বাক্ষর করে।
সেচ কুয়ো থেকে এই জিনিসপত্র উদ্ধারের সময় ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়া মফস্বল থানার মহুদা গ্রামের কাছে ব্যাপক ভিড় জমে যায়। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দুটি পাম্পের সাহায্যে প্রায় ৩০ ফুট গভীর কুয়ো থেকে জল তুলে ডিভিআরসহ ওই জিনিসপত্রগুলি উদ্ধার করে। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা স্বপন রাজোয়াড় নামে এক যুবককে দড়ি দিয়ে কুয়োতে নামিয়ে বালতির মাধ্যমে জিনিসগুলি উপরে তোলে। পাম্পের সাহায্যে প্রায় ২০ ফুট জল বাইরে ফেলতে ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতি করার পর সাত দুষ্কৃতীর মধ্যে ছ’জন শহরের রাঘবপুর মোড় হয়ে চরগালি, মহুদা হয়ে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দনকেয়ারি থানার বারমেশ্যা হয়ে পালিয়ে যায়। মহুদা থেকে ঝাড়খণ্ড মাত্র আড়াই কিমি। অন্যদিকে, পুরুলিয়া মফস্বলের ওই মহুদা থেকে শহর পুরুলিয়ার দূরত্ব কমবেশি ১৫ কিমি।
দেখুন ভিডিও: