জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: এসআইআর খসড়া ভোটার তালিকায় বাদ পড়েছে একাধিক মতুয়ার নাম! যা নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। পাশে থাকার বার্তা দিতে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো দেবেন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে৷ যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুজো দিতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। যা নিয়ে পালটা তোপ মমতা ঠাকুরপন্থীদের। তাঁদের কথায়, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখানে আসা ও পুজো দেওয়া কেউ আটকালে রক্তের গঙ্গা বইবে৷' যা নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে ক্রমশ চড়ছে উত্তেজনার পারদ।
আগামী ৯ জানুয়ারি ঠাকুরবাড়ি যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ''অভিষেক যদি গায়ের জোরে অনেক ফোর্স নিয়ে জোরপূর্বক এখানে আসেন, তাহলে তাঁকে পুজো দিতে দেওয়া হবে না। মতুয়ারা মিছিল করে ধিক্কার জানাবেন।” বিজেপি নেতার কথায়, ''আগে তাঁর পিসি হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে যে বিকৃত মন্তব্য করেছিলেন তার জন্য ক্ষমা চাক, তারপর উনি পুজো দিতে আসুক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতুয়াদের পাশে থাকার দরকার নেই।” পালটা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন মতুয়া মহা সংঘ।
সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ গাইন মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ''ঠাকুরবাড়ি মতুয়াদের বাড়ি, ভক্তদের বাড়ি, এখানে যে কোনও ধর্ম, বর্ণ রাজনীতির লোক আসতে পারে৷ শান্তনু ঠাকুর নিজের ব্যক্তিগত বাড়ি মনে করছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখানে আসা ও পুজো দেওয়া কেউ আটকালে রক্তের গঙ্গা বইবে৷'' প্রয়োজনে রক্ত দিতেও প্রস্তুত, নিতেও প্রস্তুত বলেও হুঁশিয়ারি মতুয়া মহা সংঘের।
এই বিষয়ে ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা বাগদার তৃণমূল বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর বলেন, ''ঠাকুর বাড়ি, সবাই আসতে পারেন৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন পুজো দেবেন৷ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীও আগে এসেছিলেন৷ আমি দাদা-সহ সকলের কাছে অনুরোধ করব যাতে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।''
যদিও এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের পালটা মন্তব্য, ''গত দু'বছর আগে ঠাকুরবাড়িতে যখন অভিষেক এসেছিলেন, সেই সময় ঠাকুরবাড়ির প্রত্যেকটা রাস্তা, গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশকে দিয়ে এই ঔদ্ধত্য দেখানো হয়। এবারও যদি ওইভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতে চান, তাহলে ঢুকতে দেওয়া হবে না।'' শান্তনুর দাবি, ''এটা একটা মন্ত্রীরও বাড়ি। তাঁর যাতায়াতের রাস্তা আটকে দেবে৷ আসা যাওয়া করতে পারবে না এটা হলে প্রতিবাদ করব।''
বলে রাখা প্রয়োজন, এসআইআরে প্রচুর উদ্বাস্তু মতুয়াদের নাম বাদ পড়তে পারে বলে শঙ্কা৷ বনগাঁ মহকুমায় খসড়া তালিকায় প্রায় ১ লক্ষ ৪০ লক্ষ মানুষের নাম রয়েছে। যাঁদের মধ্যে অনেকেই মতুয়া এবং উদ্বাস্তু। যা নিয়ে ক্ষোভ, আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই আবহেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরবাড়ি যাওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
