নব্যেন্দু হাজরা: ইলিশ মরশুমের সূচনাতেই ধাক্কা। পঞ্চায়েত ভোটের কারণে কিছুটা থমকাল ট্রলারের প্রপেলার। বৃহস্পতিবার থেকে সরকারিভাবে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। কিন্তু আগামী কয়েকদিনে কত ট্রলার মাছশিকারের জন্য সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট ধন্দ। কারণ, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট। দিঘা, কাকদ্বীপ, নামখানার মতো রাজ্যের যেসব গ্রামীণ এলাকা থেকে মূলত মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যান, সেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহ সর্বব্যপী। মৎস্যজীবীদের অনেকে তো বটেই, ট্রলার কর্মীরাও দলে দলে ভোটপ্রক্রিয়ায় শামিল। ফলে মরশুম শুরু হলেও মাছ ধরতে যেতে আগ্রহী হবেন ক’জন?
এই সংশয়েরই প্রতিফলন রাজ্যের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুলচন্দ্র দাসের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের কারণে অনেকেই মাছ ধরতে যাচ্ছেন না এখনই। তাঁরা ভোটের নানা কাজে ব্যস্ত। ফলে কত ট্রলার এবার নামবে, তা আরও কটা দিন দেখতে হবে।’’ প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত মাছের প্রজনন কাল। তাই এই সময় সমুদ্র ও নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। নিষেধাজ্ঞা উঠলে ট্রলার-লঞ্চে দল বেঁধে সমুদ্রে পাড়ি দেন মৎস্যজীবীরা। বৃহস্পতিবার থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে ট্রলার নামানোর কথা। কিন্তু এবার সেই সংখ্যাটা বেশ কম।
[আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেনে ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা, স্টেশনে ৪ মহিলাকে শ্লীলতাহানি! নিমেষে ভাইরাল ভিডিও]
মাছের আড়তদারদের কথায়, মাস দুয়েক ধরে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ। এবার সমুদ্রে যাওয়া শুরু হচ্ছে। কিন্তু লোকের কিছুটা সংকট রয়েছে। কোনওবছর এই সময়ে নির্বাচন হয় না। এবছরই হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের একটা বড় অংশ এখন পঞ্চায়েত ভোটের কাজে ব্যস্ত। প্রার্থীর মনোনয়ন থেকে প্রচারে যিনি যে দল করেন, তিনি সেই দলের প্রচারে রয়েছেন। ফলে তাঁরা এখন ট্রলার নামাবেন কি না সন্দেহ। পাশাপাশি এবছর একেবারেই বৃষ্টি হয়নি। সমুদ্রে মাছ কতটা আসবে তা নিয়েও সংশয়ে মৎস্যজীবীদের একাংশ। তাই অনেকেই এখনই ট্রলার নামাতে চাইছেন না।
চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ- এই তিন মাস মাছের বংশবৃদ্ধির সময়। এই সময় নদী, খাল-বিল-পুকুর কোনও জায়গা থেকেই খুব একটা মাছ ধরা হয় না। ইলিশ ধরার উপর তো নিষেধাজ্ঞাই থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে। যে কারণে বাজারে এখন টাটকা মাছের আকাল। জোগানে ঘাটতি থাকায় দামও বেশি। বেশিরভাগই যে মাছ পাওয়া যায়, তা কোল্ডস্টোরেজের। মাছের আড়তদাররা বলছেন, সবকিছু একটু কেমন যেন। ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর হাজার ছয়েক ট্রলার নামে। এবার সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমতে পারে। কারণ এক তো তাপপ্রবাহের দাপট। বৃষ্টি না হলে মাছ সমুদ্রের জলের উপরে আসবেও না। জালে পড়বে না। আর দ্বিতীয়ত পঞ্চায়েত ভোটে বহু মৎস্যজীবী ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচনের কাজে। যে কারণে তাঁরাও ভোট শেষ হওয়ার আগে যেতে চাইছেন না।
[আরও পড়ুন: ‘মার খেয়েছে ওরা’, ৬০ BJP প্রার্থীর মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াল হাই কোর্ট]
মানিকতলা মাছ ব্যবসায়ী সমিতির তরফে বাবলু দাস বলেন, ‘‘বাজারে এখন মাছের জোগান কম। তাই দাম কিছুটা বেশি। কারণ মাস তিনেক ধরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে নদীতে, পুকুরে। এবার আবার মাছ ধরা শুরু হবে। কিন্তু ভোটের কারণে মৎস্যজীবীদের একটু সংকট রয়েছে।’’
