shono
Advertisement

সত্যি হল আশঙ্কা, বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে বাঘই

বাঘের আতঙ্কে কাঁটা গ্রামবাসীরা। The post সত্যি হল আশঙ্কা, বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে বাঘই appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:58 PM Jan 06, 2020Updated: 07:43 PM Jan 06, 2020

দেবব্রত দাস, খাতড়া: আশঙ্কাই সত্যি হল। বাঁকুড়ার বারিকুল থানা এলাকায় অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ বাঘ বা বাঘিনীরই। সোমবার বারিকুল ও খেজুরখেন্ন্যা গ্রামের জমিতে জন্তুর পায়ের ছাপ সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন রাজ্যের চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট (সেন্ট্রাল) রাজীব শর্মার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল। ঘন্টাখানেক ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি বলেন, “পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে ওটা বাঘের। তবে পায়ের ছাপ দেখে এখনই বলা যাচ্ছে না ওটা বাঘ না বাঘিনীর। ওর গতিবিধি জানার জন্য আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষের এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

Advertisement

শুক্রবার রাতের অন্ধকারে কোনও অজানা জন্তু বারিকুলের গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। শনিবার সকালে ওই এলাকার কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে প্রথমে তা দেখতে পান। বন্য জন্তুর বড় বড় পায়ের ছাপ দেখে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। গ্রামবাসীরা প্রথমে ওই ছাপ দেখে বাঘ জাতীয় কোনও জন্তু এলাকায় ঢুকেছে বলে দাবি করেছিলেন। যদিও বনদপ্তর গত দু’দিন ধরে সেটি বাঘের ছাপ নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। ওই ছাপ কোনও নেকড়ে বা বড়সড় বনবিড়ালের হতে পারে বলে দাবি করেছিলেন স্থানীয় বনকর্তারা। সোমবার অবশ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বারিকুলে বাঘের উপস্থিতির তথ্য জোরালো হচ্ছে। আর তা যাচাইয়ের জন্য বারিকুল, খেজুরখেন্ন্যা এলাকায় বসানো হচ্ছে ট্র্যাপ ক্যামেরা। এমনকী তাকে ধরার জন্য খাঁচাও পাতা হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বনকর্মীদের নিয়ে রাতে টহলদারির জন্য চারটি দলও গড়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

[আরও পড়ুন: ক্রমশ জোরাল হচ্ছে ‘বাঘ’ আতঙ্ক, ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে পাতা হল খাঁচা]

বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, “বারিকুল ও খেজুরখেন্ন্যা গ্রাম লাগোয়া সরষে জমিতে যে বন্য জন্তুর পায়ের ছাপ মাটিতে পাওয়া গিয়েছে তা  বাঘেরই মনে হচ্ছে। এখানকার জঙ্গলে বাঘ থাকার কথা নয়। তবু অন্য কোনও জঙ্গল থেকে সেটি ঢুকে পড়তে পারে। তার গতিবিধি জানার জন্যই ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। আপাতত বারিকুল ও খেজুরখেন্ন্যার যে এলাকায় ওর পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে সেখানকার রাস্তা ও জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ৬টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। পাশাপাশি স্থানীয় চারটি রেঞ্জের বনকর্মীদের নিয়ে টহলদারি দল গড়া হয়েছে। রাতে তাঁরা টহল দেবেন। তেমন হলে খাঁচাও পাতা হবে।”


রবিবার বিনপুরের যে এলাকায় বাঘের ছাপ মিলেছে তার সঙ্গে বারিকুলে পাওয়া ছাপ প্রায় একইরকম বলে দাবি বনদপ্তরের। বারিকুল থেকে বিনপুরের ওই এলাকার দূরত্ব জঙ্গল পথে কমবেশি ২০ কিলোমিটার। বাঁকুড়ার বারিকুল থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ও বিনপুর থানার বিস্তীর্ণ সীমানা এলাকা। রাস্তার দু’পাশে জঙ্গল। বনদপ্তরের এক পদস্থ কর্তার মত, মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ পেরনো বাঘের কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওই পথ পাড়ি দেওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে।

[আরও পড়ুন: ‘রাজ্যে কোনও বন্‌ধ হবে না’, বামেদের ধর্মঘট রুখতে কড়া হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর]

২০১৮ সালে লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের হদিশ মিলেছিল। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি বনদপ্তর। গ্রামবাসীরাই ১৩ এপ্রিল বাঘঘরার জঙ্গলে পিটিয়ে মেরেছিল। এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে কারণে অবশ্য প্রথম থেকেই সতর্ক বনদপ্তর। বাঘ বা বাঘিনীকে জীবন্ত অবস্থায় খাঁচাবন্দি করা যায় সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, “বারিকুল থানা থেকে রানিবাঁধ যাওয়ার রাস্তার পাশে, খেজুরখেন্ন্যা গ্রামের বড়বাঁধের পাশে, পূর্ণাপানি জঙ্গলের রাস্তায় এবং খেজুরখেন্ন্যা মাঠের দিকে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। স্থানীয় খেজুরখেন্ন্যা গ্রাম থেকে নজরদারি করা হবে। সুন্দরবন থেকে সেগুলি আসামাত্রই বসানোর কাজ শুরু হবে।” বাঘের আতঙ্কে বারিকুল, খেজুরখেন্ন্যা গ্রামের মানুষ এখন তটস্থ। স্থানীয় বাসিন্দা কমল পাল, শুকদেব মুর্মু বলেন, “জঙ্গলে হুড়াল, শিয়াল, ভোঁদড় আছে বলে শুনেছি। অনেকে দেখেছেন। কিন্তু বাঘ আছে বলে শুনিনি। এবার শুনছি। ভীষণ ভয় লাগছে।” যদিও আতঙ্কের কিছু নেই বলেই আশ্বস্ত করেছে বনদপ্তর।

ছবি: পরেশ মাইতি। 

The post সত্যি হল আশঙ্কা, বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে বাঘই appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement