সম্যক খান, মেদিনীপুর: নতুন সবুজ বিস্ময় বাংলার বুকে! আবিষ্কৃত হল নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি। তাও সেটি আবার পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের বনাঞ্চল শালবনি থেকে। ফলে এক মুহূর্তে জেলার নাম উঠে গেল আন্তর্জাতিক জার্নালে। পশ্চিমবঙ্গের জীববৈচিত্র্য গবেষণায় ঐতিহাসিক এই সাফল্য অর্জন করলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক গবেষক। অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে এখানকার গবেষক রসিদুল ইসলাম, বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডঃ দেবেন্দ্র সিংদের আবিষ্কার নজর কাড়ল বিজ্ঞানী মহলে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ডি. ক্রিস্টিন কার্গিলও।
যৌথ গবেষণার মাধ্যমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বনাঞ্চল শালবনির কলসীভাঙা থেকে একটি সম্পূর্ণ নতুন ওই উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নতুন লিভারওয়ার্ট প্রজাতিটির নাম রাখা হয়েছে ফসমব্রোনিয়া বেঙ্গলেনসিস(Fossombronia bengalensis), যাতে বাংলার ছোঁয়া রয়েছে। ইতিমধ্যে গবেষণাটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানের জার্নাল ‘ফাইটোটাক্সা’তে প্রকাশিত হয়েছে।
শালবনির জঙ্গলে আবিষ্কৃত নয়া উদ্ভিদ। নিজস্ব ছবি।
উদ্ভিদের নয়া প্রজাতি আবিষ্কারের নেপথ্যে নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার স্যাঁতসেঁতে ও ছায়াঘেরা শাল বনাঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রসমীক্ষার সময় এই উদ্ভিদটি প্রথম নজরে আসে শালবনির কলসিভাঙাতে। আকারে ক্ষুদ্র হলেও লিভারওয়ার্ট উদ্ভিদগুলি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম স্থলজ উদ্ভিদের অন্যতম। দীর্ঘ গবেষণা হয় উদ্ভিদটিকে নিয়ে। গবেষকদের মতে, এই নতুন প্রজাতি অন্যান্য পরিচিত প্রজাতির সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রাখলেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন উদ্ভিদটির অত্যন্ত ঢেউখেলানো ও অনিয়মিত পাতার গঠন, পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা, গাঢ় বেগুনি-লাল রাইজয়েড, ক্ষুদ্র আকারের স্পোর যেগুলিতে জটিল নকশা আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলিই প্রমাণ করে যে এটি বিজ্ঞানের কাছে একেবারেই নতুন প্রজাতি। নতুন এই আবিষ্কার একদিকে ভারতের লিভারওয়ার্ট বৈচিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনই অপরদিকে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের নামও উজ্জ্বল করল। এর সঙ্গে সঙ্গে অনুপ্রাণিত করল তরুণ গবেষকদেরও।
নামকরণে বাংলার ছোঁয়া - ফসমব্রোনিয়া বেঙ্গলেনসিস। নিজস্ব ছবি।
নতুন এই প্রজাতির উদ্ভিদ এই মুহূর্তে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংসের ফলে এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্ভিদ মারাত্মকভাবে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ছে। তাই এখনই সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক অমলবাবুর কথায়, ''প্রতিটি নতুন প্রজাতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির কাছে এখনও শেখার অনেক কিছু বাকি আছে। বাংলার গর্ব, বিজ্ঞানের সম্পদ। ফসমব্রোনিয়া বেঙ্গলেনসিস শুধুমাত্র একটি নতুন উদ্ভিদ নয়, এটি বাংলার বন, বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক গর্বের প্রতীক।''
