সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লকডাউনের মধ্যে এ যেন এক অন্য ‘লকডাউন’! করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে গত মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউন জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই লকডাউনে ছাড় রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের। কিন্তু পুরুলিয়ার ৩৯টি গ্রামে যেন সব কিছুরই প্রবেশ নিষেধ।
জেলার কুড়িটি ব্লকের ৩৯টি গ্রামে ঢোকার রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে কিংবা গাছ ফেলে অথবা দড়ি টাঙিয়ে প্রবেশই নিষেধ করে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বহিরাগতরা যেমন গ্রামে ঢুকবেন না, তেমনই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেও ছাড় নেই গ্রামবাসীদের। গ্রামের মধ্যে যা জোগান রয়েছে তা কাজে লাগিয়েই আপাতত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে হবে। করোনা ভীতিতে এভাবেই অবরুদ্ধ করে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করেছে পুরুলিয়ার এই গ্রামগুলি। একে অপরের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে এই জেলায় যেন এই ৩৯টি গ্রাম রীতিমতো নিদর্শন হয়ে গিয়েছে।
তবে এই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কোন গ্রামকে এভাবে অবরুদ্ধ করা যায় না। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ৩৯টি গ্রামের এই পদক্ষেপকে সোশ্যাল সাইটে বাহবা জানাচ্ছেন মানুষজন। তাই পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখন আমাদের একটাই স্লোগান করোনা মুক্ত পুরুলিয়া। ফলে ওই গ্রামগুলির মানুষজন সামাজিক মেলামেশা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাকে কুর্নিশ জানাই। তবে সেই সঙ্গে সকলকেই বারে বারে হাত ধুতে হবে। এবং নিজের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।”
[আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী ও আবদুল মান্নানের উদ্যোগ, বাড়ি ফিরলেন আটকে পড়া শ্রমিকরা]
পুরুলিয়ার গ্রাম করোনা নিয়ে সচেতন হওয়াতেই এই জেলায় হোম কোয়ারান্টাইনের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যাঁরাই ভিন রাজ্য বা বিদেশ থেকে এসেছেন তাঁদেরকে ঘরবন্দি করতে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন এই জেলার গ্রামাঞ্চলের আমজনতাও। গত বুধবার সন্ধ্যায় এই জেলায় হোম কোয়ারান্টাইন ছিল ৭,৫৮৯। সেই জায়গায় বৃহস্পতিবার সংখ্যাটা পৌঁছেছে ১০,১৪৭। প্রাতিষ্ঠানিক বা হাসপাতাল কোয়ারান্টাইন আট থেকে কমে হয়েছে তিন। আইসোলেশন চার থেকে কমে হয়েছে শূন্য। ফলে খানিকটা যেন এই জেলায় ভীতি কমেছে।
কিন্তু এই মারণ রোগ মোকাবিলা করতে ধারাবাহিক কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর করোনা মোকাবিলায় ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিকদেরকে নিয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স করে বৈঠক করেন। সেখানেও নিরাপদ দূরত্ব থেকে কাজকর্মের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়। গত রবিবার জনতা কারফিউয়ের দিন পুঞ্চার মিশ্রদেউলি গ্রাম সবার প্রথম গ্রামের সদর রাস্তা বন্ধ করে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তারপর থেকে এক এক করে পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ওই পথেই হাঁটছে।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও
The post বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ রাস্তা, লকডাউনে পুরুলিয়ার ৩৯ গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ appeared first on Sangbad Pratidin.
