সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্মার্টফোন গোটা বিশ্বকে মুহূর্তে এনে দেয় হাতের মুঠোয়। তবে সেই স্মার্টফোনের যুগেও সবুজে ঘেরা অযোধ্যা ব্রাত্য। তারা এখনও নির্ভর করে ‘ডাকহরকরা’-র উপরেই। বছরের পর বছর ধরেই জঙ্গলমহলের ডাকবিভাগের উজ্জ্বল নাম হয়ে রয়েছে ‘ডাকহরকরা’ পুতনা মুড়া। টানা ৩২ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌছে দিচ্ছেন এই গ্রামীন ডাকসেবক। যিনি সবার কাছেই সুখ-দুঃখের বার্তা বাহক আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার উপরেই আলোকপাত করতে চায় পুরুলিয়া ডাকবিভাগ।
ঝড়, জল, বৃষ্টি মাথায় করে অযোধ্যা পাহাড়ে “রানার” ওরফে পুতনা মুড়া খবরের বোঝা নিয়ে ছুটে চলে। পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে বছর বাহান্নর পুতনা পৌঁছে যান বাড়ি বাড়ি। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা হিলটপের বাসিন্দা পুতনা। পাহাড়ের পঁচিশটি গ্রামের বাড়িতে খবর পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। গ্রামের দূরত্ব চার হোক বা আট, কোথাও আবার বারো কিলোমিটারের রাস্তা পেরিয়ে যান অনায়াসে। চলতি পথে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বছরের ফি দিনে চিঠি বিলি করেন পুতনা। যখন বাড়ি ফেরেন তখন আঁধার নামে।
ডিজিটাল মিডিয়া বা স্মার্টফোন যাই থাকুন না কেন এই পাহাড়ের বড়গোড়া, ছাতরাজেরা, উসুলডুংরী, সাপারমবেড়াতে যে আজও বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সেই চিঠিই। তাই অনায়াসেই পুতনা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এই পাহাড়ে। তবে পুতনার জীবনে এই কাজ করার অভিজ্ঞতা কোনও দিনই ছিল না। পুতনা জানান, “প্রথমে পাহাড়ি পথে হেঁটে গ্রাম ঘুরে ঘুরে চিঠি বিলি করতে খুব ভয় লাগত। একাধিকবার হাতির দলের সামনে পড়েছি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে বেঁচে গিয়েছি। এখন সব অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আর কিছুতেই কোন ভয় লাগে না।” ভাললাগা নয়, ১৯৮৮ সালে পুতনার এই কাজ শুরু করার পিছনে ছিল অন্য কারণ। সেই ছয়শো টাকার বেতন এখন বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। হলেও ৭২৩১৫২ উপডাকঘরের একজন অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন পুতনা।
[আরও পড়ুন: সংসার বাঁচাতে টোটোর প্যাডেলে পা, নারী দিবসে প্রচারের আলোয় তেহট্টের গৃহবধূ]
দেশের ডাকবিভাগের প্রতি পুতনার অসামান্য অবদানের জন্য পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন কয়েকমাস আগেই মানপত্র দিয়ে সম্মান জানায় তাঁকে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “পুতনা মুড়া আমাদের গর্ব। অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামীন ডাকবিভাগকে সচল রাখার অন্যতম শরিক তিনি। যেভাবে নানান প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই দেশের ডাকবিভাগের কাছে উদাহরণই বটে।” প্রতিদিন সকাল দশটার আগেই উপডাকঘরে চলে আসেন তিনি। তারপর পোস্টমাস্টারের দেওয়া চিঠির থলে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন। এরপরই একের পর এক গ্রাম হেঁটে হেঁটে সেই চিঠি পৌঁছে দেন। পোস্টমাস্টার বিবেকানন্দ মাহাতোর কথায়, “পুতনা দেবী পাহাড়ের মানুষের সুখ–দুঃখের সঙ্গী। টানা বত্রিশ বছর ধরে পাহাড়ের গ্রামীন ডাকসেবককে সচল রেখেছেন। কোন বাধাই যেন তার কাছে বাধা নয়। নারী দিবসের প্রাক্কালে তিনি আক্ষরিক অর্থেই অনন্যা।”
[আরও পড়ুন: রবীন্দ্রসংগীতে অশ্লীল শব্দ জুড়ে ক্লাসরুমে উদ্দাম নাচ! এবার বিতর্কে বারাসতের স্কুল]
The post অযোধ্যা পাহাড়ে ছুটছে ‘রানার’ পুতনা, ৩২ বছর ধরে ডাকসেবকের কাজ করছেন মহিলা appeared first on Sangbad Pratidin.
