অর্ণব দাস, বারাকপুর: সুপ্রিম কোর্টের শেষ শুনানির দিন মাত্র পাঁচ মিনিট আলোচনা হয়েছে মেয়েকে নিয়ে। শুক্রবার সাক্ষাৎকারে সরাসরি এমনই আক্ষেপের সুর আর জি করে নির্যাতিতার মা-বাবার গলায়। তাঁদের কথায়, "সুপ্রিম কোর্টে শেষ শুনানির দিন দেখলাম মেয়েকে নিয়ে ৫ মিনিট কথা হল। বাকি সময় মেডিক্যাল কলেজের সুরক্ষা নিয়েই কথা বলা হয়েছে। সারাক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে এটাই দেখলাম। এসব দেখে মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, কিন্তু উত্তর পাই না।" সঙ্গে মায়ের সংযোজন, ‘‘মেয়ের বিচার নিয়ে আদালতে যতক্ষণ আলোচনা হোক চেয়েছিলাম, হয়নি। তারিখও দেরিতে পড়ছে।"
মেয়ের মৃত্যু যেহেতু আর জি করে হয়েছিল তাই সেখানে ময়নাতদন্ত হোক চাননি বলে এদিন ফের জানান মৃতার মা-বাবা। যদিও আন্দোলনকারী চিকিৎসক পড়ুয়াদের দাবি মেনেই সেখানে ময়নাতদন্ত হয়েছিল বলেই জানা গিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে মা-বাবা বলেন, "আমরা ময়নাতদন্ত ওখানে (আর জি করে) করাতে চাইনি। তাই মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে চলে যাওয়ার পরে দেহ সংরক্ষণ করতে চেয়ে টালা থানায় গিয়েছিলাম। এক প্রতিবেশীও সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পুলিশ আমাদের বোঝাচ্ছিল, চাপ দেওয়া হচ্ছিল। পরে জানতে পারি আমাদের অনেক আগে মেয়ের দেহ বাড়ি নিয়ে গিয়েছে। গিয়ে দেখি পুলিশে ঘেরাটোপে কার্যত ভিআইপির মতো করে মেয়ের মৃতদেহ রাখা রয়েছে। তাই দাহ করতে নিয়ে যাওয়ার সময়, মেয়ের এক বান্ধবী বলেছিল, নিতে দিও না। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।"
তাঁরাই চেয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের বদলে সিবিআই তদন্ত করুক। সেই মতো আদালতের নির্দেশে তদন্ত চালিয়ে প্রথম চার্জশিটও জমা দিয়েছে সিবিআই। তবে তদন্তের গতিপ্রকৃতি তাঁদের অজানা। একথা উল্লেখ করে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "সিবিআইয়ে ভরসা আছে। ওরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বলছে কাজ এগোচ্ছে, ধৈর্য রাখতে হবে। কিন্তু তদন্ত প্রসঙ্গে তাঁরা বলছে বলা বারণ। তাই তদন্ত কতদূর হয়েছে, কী হচ্ছে, কিছুই জানতে পারছি না।" এ নিয়ে তাঁরা সিবিআইয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা উপেন বিশ্বাসের থেকেও পরামর্শ চাইলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তা বলেন, "তদন্ত কতদূর এগিয়েছে তা সিবিআইয়ের তরফে পরিবারকে জানানো উচিত। যদি তদন্তের অগ্রগতি না বলা হয় তাহলে সিবিআইয়ের সর্বোচ্চ স্তরে সুপ্রিম কোর্টের কথা উল্লেখ করেছেন লিখিত জানাতে হবে। আদালতে আইনজীবীকেও এ নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।"
এই প্রসঙ্গ টেনে সন্তানহারা মা-বাবার স্পষ্ট বক্তব্য, "আমার মেয়ের বিচারের আশায় তাকিয়ে আছি। এর জন্য যার যার সঙ্গে কথা বলতে হয় বলব। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যেখানে যেতে হবে যাব। আমাদের হারানোর কিছু নেই। তাই ভয় নেই। আমরা বিচার চাই।"