রাজা দাস, বালুরঘাট: আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে সর্বস্ব৷ ভস্মীভূত হয়েছে প্রতিমা তৈরির সমস্ত সামগ্রী৷ আগুন গিলেছে শেষ আশ্রয়ের একচালা বাড়িও৷ সব হারিয়ে গত বছরের পুজোর আগে চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল বালুরঘাটের বিখ্যাত মৃৎশিল্পী উত্তম পালকে৷ তাঁকে সাহায্যের করতে এসে ঢালাও প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গিয়েছিলেন নেতা-মন্ত্রী ও আমলারা৷ তবে, বছর ঘুরতে চললেও মেলেনি এক টাকার সরকারি সহায়তা। অবশেষে, সাহায্য না পেয়ে রাস্তার পাশে কোনওক্রমে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করলেন সহায়সম্বলহীন ওই শিল্পী৷ শিল্পী ও তাঁদের শিল্পকে তুলে ধরতে সরকারি একাধিক পরিকল্পনা থাকা স্বত্বেও এখনও বঞ্চিত উত্তমবাবু৷ দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়ে বর্ষীয়ান এই শিল্পীর৷
[ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল তৈরি করে যৌনকর্মী পরিচয়, পুলিশের দ্বারস্থ কলেজ ছাত্রী]
জানা গিয়েছে, বালুরঘাট শহর সংলগ্ন চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৃৎশিল্পী উত্তম পাল। স্ত্রী মিতা পাল, মেয়ে উমা ও উর্মি পালকে নিয়ে সংসার৷ কাঠের দোতালা বাড়ির সঙ্গে ছিল তাঁর প্রতিমা গড়ার কারখানা। সেখানে কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে তিনি প্রতিমা গড়ার কাজ করতেন। গতবছর ৩০ আগস্ট রাতে সট সার্কিট থেকে উত্তমবাবুর বাড়িতে লেগে ছিল বিধংসী আগুন। পরনের এক চিলতে কাপড় ছাড়া কিছুই রক্ষা করতে পারেননি৷ বাড়িঘর, কারখানা সবটাই পুড়ে ছাই৷ পরিবার নিয়ে তিনমাস তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রে। এই মৃৎশিল্পী ও তাঁর পরিবারের সাহায্যে ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রী আমলারা প্রতিশ্রুতি দিলেও মেলেনি কিছুই। তবে, স্থানীয় ক্লাব ও কয়েকজনের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বলেই এবার ফের প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে পেরেছেন উত্তমবাবু। এবছর আটটি বড় দুর্গা ও ২৫টির মতো বিশ্বকর্মা ঠাকুর গড়ার বরাত পেয়েছেন শিল্পী।
[অধ্যক্ষের বদলি রুখতে রক্তাক্ত আন্দোলনে শামিল পলিটেকনিক পড়ুয়ারা]
আর্থিকভাবে ভেঙে পড়া মৃৎশিল্পী উত্তম পাল জানান, একটিও কানাকড়িও রক্ষা করতে পারেননি তিনি। পরিবার নিয়ে রাস্তায় ঠাঁই হয়েছিল তাঁদের। শিল্পীর এই দুরবস্থার কথা জানতেন বালুরঘাট ব্লকের বিডিও থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা, স্থানীয় নেতা বিপ্লব খাঁ থেকে শুরু করে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা৷ প্রতিশ্রুতির বন্যা বইলেও মেলেনি সাহায্য৷ সব হারিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেন তিনি। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি সাহায্য৷ এলাকার ক্লাব ও কিছু মানুষের সাহায্যে তিনি পুরনো টিনের ছাদ দিয়ে নিজের ভিটেয় আস্তানা গড়েছেন৷ সেখানেই রাস্তার পাশে শুরু করেছেন প্রতিমা গড়ার কাজ। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন তিনি। সরকারি সাহায্য পেলে নতুন করে পরিবার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানান মৃৎশিল্পী উত্তম পাল৷
