ধীমান রায়, কাটোয়া: এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার পর নাম উঠেছিল খসড়া ভোটার তালিকাতেও! কিন্তু ভোটারের 'বাবা'র নামের জায়গায় উল্লেখ শ্বশুরের নাম রয়েছে। এনিয়ে কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাস্কর মুখোপাধ্যায় (৫৪)। এই পরিস্থিতিতে আজ শনিবার, সকালে ঘর থেকে উদ্ধার হল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। পরিবারের দাবি, এসআইআর (SIR in Bengal) আতঙ্কেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তবে স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ। কীভাবে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি হুগলির চন্দননগর। তিনি আউশগ্রামের কল্যাণপুর গ্রামে স্ত্রীয়ের পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। ২০০৪ সালে কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা সুবিমল সরকারের মেয়ে সোমাদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় ভাস্করবাবুর। সুবিমলবাবু অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। সোমাদেবী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। গ্রামে একটি মুদিখানা দোকান চালাতেন ভাস্কর। আজ শনিবার সকালে শাশুড়ি শান্তিলতাদেবী ঘুম থেকে ওঠার পর তাঁর জামাইয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার।
সুবিমল সরকার বলেন, ''আমার মেয়ের বিয়ের পর থেকেই জামাই ভাস্কর চন্দননগর থেকে আমার কাছেই চলে আসেন। ঘরজামাই ছিলেন। বিয়ের পর থেকে আউশগ্রামের ভোটার ছিলেন। কিন্তু তখন ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময় কোনও ভুলের কারণে ওর বাবার নামের জায়গায় আমার নাম উঠে যায়। পরে সংশোধনের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক হয়নি।'' সুবিমল সরকারের কথায়, এহেন ভুলের কারণেই ভাস্কর দুঃচিন্তার মধ্যে ছিলেন। আর সেই কারণেই এই ঘটনা বলে দাবি।
শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। (নিজস্ব ছবি)
জানা গিয়েছে, ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বাবার নাম পঞ্চানন মুখোপাধ্যায়। কিন্তু প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় ভাস্করবাবুর নাম সুবিমল মুখোপাধ্যায় বলে উল্লেখ রয়েছে। মৃতের ছেলে উল্লাস বলেন, ''ওই নাম সংশোধনের জন্য আগে চারবার আবেদন করা হয়েছিল। এসআইআর চালুর পর বাবা তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। নাগরিকত্বের জন্য যে ১১ দফা তথ্যের কথা বলা হয়েছে তাও বাবার ছিল না। কারণ চন্দননগরে গিয়েও বাবা তা জোগাড় করতে পারেননি।" সেই কারণেই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন বলে মন্তব্য উল্লাসের।
