সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পুরভোট কবে, কারও কাছেই সুস্পষ্ট উত্তর নেই। কিন্তু পুরসভার টিকিট পাওয়া নিয়ে বর্ধমানে তৃণমূলের কোন্দল বেড়েই চলেছে। এবার বর্ধমানে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর পরেশ সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন দলেরই একাংশ। যাঁদের মধ্যে একসময়ে পরেশবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠও রয়েছেন।

রবিবার রাতে প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিক্ষুব্ধরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর বা তাঁর পরিবারের কাউকে প্রার্থী করা চলবে না। পালটা পরেশবাবুও তোপ দেগেছেন। তাঁর অভিযোগ, দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর এর পিছনে মদত রয়েছে দলেরই এক প্রভাবশালী নেতার। পরেশবাবু বলেন, “দলের ওই নেতা প্রতিটি ওয়ার্ডে এইভাবে চক্রান্ত করছে। গত লোকসভা ভোটে দায়িত্ব নিয়ে শহরে দলকে ডুবিয়েছিল। পুরভোটেও তাই করতে চাইছে। শুধু আমি নই, শহর তৃণমূল সভাপতি অরূপ দাস, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত, প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা চিকিৎসক শঙ্খশুভ্র ঘোষ, সকলেরই বিরুদ্ধেই ওই নেতা কারসাজি করছেন, হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন।”
[ আরও পড়ুন: স্কুলেই ২ ছাত্রীর ‘শ্লীলতাহানি’, অভিভাবকদের বিক্ষোভ সামাল দিতে লাঠিচার্জ পুলিশের ]
পরেশবাবু দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী, নেতা। দলের দুর্দিনেও লড়াই করেছেন। গত পুরভোটে (২০১৩ সালে) ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই ওয়ার্ড এবার মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে নিজের ওয়ার্ডে তাঁর দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। তাঁর পরিবারের কেউ প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা। আবার পরেশবাবুকে দল চাইলে অন্য ওয়ার্ড থেকেও প্রার্থী করতে পারে। কিন্তু এখনও তৃণমূলের তরফে কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে দলেরই একাংশ তাঁরই ওয়ার্ডে তাঁর বিরুদ্ধে সব হয়েছেন। তাঁদের অন্যতম স্বপন দাস বলেন, “আমরা প্রার্থী ঠিক করব। দল যাচাই করে প্রার্থী করুক। দল না মানলে আমরা বিরুদ্ধে যাব না। আমরা বসে যাব। যারা (প্রাক্তন কাউন্সিলর) বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করে তাদের সঙ্গে আমরা নেই।” কালিদাস ভট্টাচার্য নামে আর একজন বলেন, “প্রাক্তন কাউন্সিলর আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। আমরা তাঁর সঙ্গে নেই। আমাদের এলাকার কোনও উন্নয়নই উনি করতে পারেননি।”
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওটা সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর। পরেশবাবু বলেন, “শহরের ওই প্রভাবশালী পুরসভায় একাই ক্ষমতা ভোগ করেছেন। অন্য কোনও কাউন্সিলরকে উন্নয়ন করতে দেননি। সব নিজের ওয়ার্ডে করেছেন পুরসভার টাকায়। অশিক্ষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ওই নেতাকে শহরের মানুষকে এখন শহরের মানুষ চাইছেন না। তাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলাদা করে নিজে সংগঠন করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছেন ওই নেতা।” কয়েকদিন আগে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্খশুভ্র ঘোষ নিজের এলাকায় জনসংযোগে বেরিয়ে দলেরই একাংশের হাতে বেদম মার খেয়েছিলেন। আর এক প্রাক্তন কাউন্সিলর রত্না রায়কেও দলের একাংশ হেনস্তা করে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলরকে না জানিয়েই দলের একাংশ গণ কনভেনশন করে। পরেশবাবুর অভিযোগ, সব ক্ষেত্রেই শহরের ওই প্রভাবশালী নেতার মদত রয়েছে। দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কী ঘটেছে তা তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
[ আরও পড়ুন: যুবকের লালসা শিকার ন’বছরের বালিকা, হাতেনাতে পাকড়াও অভিযুক্ত ]
The post তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, পুরসভা ভোটের আগে গোষ্ঠী কোন্দল বর্ধমানে appeared first on Sangbad Pratidin.