Advertisement
শয়তানের 'জাতভাই'! কেন যুগে যুগে ভয়ের প্রতীক জোকাররা?
পেনিওয়াইজ একা নয়, তার রয়েছে বহু দোসর।
'ইট: ওয়েলকাম টু ডেরি' নামের এক হরর সিরিজ সম্প্রতি ওটিটি মঞ্চে প্রবল সাড়া ফেলেছে। বিশ্ববিশ্রুত সাহিত্যিক স্টিফেন কিং-এর বিখ্যাত উপন্যাস 'ইট', যা পরবর্তী সময়ে সেলুলয়েডেও দর্শকের মন জিতেছে দুই পর্বে, এটা তারই প্রিকোয়েল। আর উপন্যাস, সিনেমার মতোই এখানেও মূল আকর্ষণ পেনিওয়াইজ। সেই 'দ্য ডান্সিং ক্লাউন'ই এখানে হাড়কাঁপানো ভয়ের উৎস। এ এক আশ্চর্য রহস্য। আপাত ভাবেই জোকার মানে মজাদার। কিন্তু পেনিওয়াইজের মতো জোকাররা ভয় দেখায়। কী করে রংচঙে মজাদার মুখের বিদূষকরা হয়ে উঠল ভয়ের প্রতিনিধি, তা সত্যিই অবাক করে। কিন্তু ইতিহাসে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, এটা মোটেই কোনও নতুন ট্রেন্ড নয়। বরং বহু যুগ ধরেই জোকার ও ভয় সমার্থক হয়ে রয়েছে।
'ব্যাড ক্লাউনস' নামের এক বই লিখেছেন বেঞ্জামিন র্যাডফোর্ড। সেই লেখকের মতে, ''জোকাররা কখন দুষ্ট হয়ে ওঠে, এই প্রশ্নটাই ভুল। কেননা ওরা কখনওই ভালো হয় না।'' আসলে এই কথার মধ্যে রয়েছে ইঙ্গিত। তিনি জানিয়েছেন, জোকাররা একধরনের trickster তথা ধূর্ত। আর এখানেই তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় শয়তানের। বাইবেল থেকেই সে মহাধূর্ত। আর এই দুই ধূর্তই টিকে গিয়েছে বহু বহু কাল। বারে বারে মুখোশ ও রংচঙে পোশাকের আড়ালে হাস্যমুখ জোকারের 'অস্বাভাবিকতা' সন্ত্রস্ত করেছে মানুষের হৃদয়কে।
তবে আধুনিক সময়ে বিখ্যাত জোকারদের মধ্যে প্রথমেই যার কথা বলা উচিত সে হার্লেকুইন। ষোড়শ শতকে ইটালির কমেডি থিয়েটারের এক জনপ্রিয় চরিত্র। রুইতন চিহ্নে ভরা জামাকাপড় ও রংচড়ে মুখোশ পরা হার্লে কুইন হাস্যরসাত্মক, নীতিহীন ভৃত্যের চরিত্রে গোটা ইউরোপ মাতিয়ে তুলেছিল। আর এই সব নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল এক বিদূষক পুতুল, যার নাম 'পাঞ্চ'। সেটা অষ্টাদশ শতকের কথা। পরবর্তী সময়ে যাকে কেন্দ্র করে লেখা হবে জনপ্রিয় পাপেট শো 'পাপেট অ্যান্ড জুডি'। পাঞ্চ জোকস শোনায়। আবার বউকে ধরে মারেও। খুন করে নিজের সন্তানকে! হাস্যরস ও আতঙ্কের অনবদ্য মিশেল তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
চার্লস ডিকেন্সের 'দ্য পিকউইক পেপার্স' উপন্যাসে দেখা মেলে মদ্যপ মাতালের। এছাড়াও উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকের এক ফরাসি ও ইটালীয় অপেরায় খুনি জোকারের দেখা মেলে। পরবর্তী সময়ে ১৯২৪ সালে নির্বাক ছবি 'হি হু গেটস স্ল্যাপড'-এ দেখা মেলে এক তিতকুটে মেজাজের প্রতিহিংসাপরায়ণ জোকারের।
জোকারদের কথা হলে ব্যাটম্যানের কমিক্সকে কি ভোলা সম্ভব? ১৯৪০ সালে তার আবির্ভাব। বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য এবং মানসিক বিকৃতির প্রতিরূপ। প্রথম থেকেই সে খল। 'দ্য কিলিং জোক' বা 'আর্কহাম অ্যাসিলাম'-এর মতো কমিক্সে ব্যাটম্যান-জোকারের দুরন্ত লড়াই দেখা গিয়েছে। আর পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে চরিত্রটি ক্রমেই এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি হিথ লেজার ও জোয়াকিন ফিনিক্সের দুরন্ত অভিনয়ে জোকার চরিত্রটিকে অসামান্য শয়তানি ও দার্শনিক বীক্ষার এক মিশেল করে তুলেছেন।
বিংশ শতকের সাত ও আটের দশকে জোকাররা 'ভিলেন' হিসেবে আরও জনপ্রিয় হতে থাকে। এর নেপথ্যে ছিল মার্কিন সিরিয়াল কিলার জন ওয়েন গেসি। সে 'পোগো দ্য ক্লাউন' নামে লাগাতার খুন করে যেত। কিন্তু ঘটনা হল, সচরাচর সে জোকারের পোশাক পরত না। কেবল একবার জেলে থাকাকালীন নিজেকে পোগোর পরিচয় দিয়ে সেলফ পোট্রেট আঁকার পরই এই নাম সে পেয়ে যায়। গেসির প্রভাবে সেই সময় জোকার ভয়ের প্রতীক হয়ে উঠতে থাকে।
তবে একথা মানতেই হবে স্টিফেন কিং তাঁর 'ইট' উপন্যাসের মাধ্যমে জোকারকে এক চিরন্তন ভয়ের প্রতীক করে তুলেছেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় 'ইট'। পরবর্তী সময়ে টেলিমুভিও হয় এই নামে। সেখানে টিম কারি পেনিওয়াইজের ভূমিকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে দু'টি চলচ্চিত্র এবং এখন ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে সেই জনপ্রিয়তা অন্য মাত্রা পেয়েছে। বিল স্কার্সগার্ড চরিত্রটিকে যে মাত্রা দিয়েছেন তা অনবদ্য বললেও কিছুই বলা হয় না। প্রতি ২৭ বছর অন্তর ডেরি শহরে সে আবির্ভূত হয় শিশুদের শিকার করতে। যদিও সে আসলে বিদূষক নয়। এক নামহীন, হয়তো স্পষ্ট অবয়বহীন সত্তা... যে জোকারের রূপ ধরে অধিকাংশ সময় থাকে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:51 PM Dec 17, 2025Updated: 05:51 PM Dec 17, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
