সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভিনরাজ্য থেকে এ রাজ্য। এক জেলা থেকে আরেক জেলা। গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। পথে ছড়িয়ে অসংখ্য পায়ের ছাপ। কিন্তু ১৭ দিন পরও জিনাতের 'প্রেমিকে'র দেখা নেই। বান্দোয়ানের জঙ্গলে দেওয়া দুটি ছাগলের টোপও ব্যর্থ। মঙ্গলবার রাতে বান্দোয়ানের গঙ্গামান্নার কুইরাপাড়া এলাকার জঙ্গল থেকে উদ্ধার ৪টি ছাগলের খুবলে খাওয়া দেহ। এখনও নিখোঁজ ৬টি ছাগল। তবে সেগুলো বাঘের শিকার কি না, তা অজানা।
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির বাঁশপাহাড়ি বনাঞ্চলে ৫০টা নাইট ভিশন ক্যামেরা থেকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এক ও যমুনা বনাঞ্চলে ১৫টা ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে সেখানে ধরা দেয়নি সে। ঝাড়খণ্ডে থাকাকালীন চান্ডিলের একাধিক জায়গায় বাসিন্দারা রয়্যাল দর্শন করেছিলেন বটে। কিন্তু স্রেফ ওইটুকুই! পদচিহ্ন ছাড়া সরকারিভাবে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার ভোরে জিনাতের 'প্রেমিকে'র পদচিহ্ন পাওয়া যায় পুরুলিয়ার মানবাজার বনাঞ্চলের নেকড়া, সন্নিহিত বেলডুংরি পাহাড় এলাকায়। গ্রামবাসীদের থেকে খবর পেয়ে সেখানে যান পুরুলিয়ার বনকর্তারা।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
সুন্দরবনের ৫ জনের টিম মঙ্গলবার সকালেই বেলপাহাড়ি থেকে পুরুলিয়ার ওই এলাকায় আসে। নেকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সোনাঝুরি জঙ্গলে ওই রয়্যাল বেঙ্গল রয়েছে বলে অনুমান। প্রাথমিকভাবে তা বুঝতে পেরে সেখানে ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা হয়। জিনাতের ফেলে আসা পথ বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের কেশরা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আরও দুটি ছাগলের টোপ দেওয়া হয়। সেই টোপ ব্যর্থ হয়। তবে মঙ্গলবার রাতে বান্দোয়ানের গঙ্গামান্নার কুইরাপাড়া এলাকার জঙ্গল থেকে ৪টি ছাগলের খুবলে খাওয়া দেহ পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে রয়েছে ৬টি ছাগল। তবে বাঘের হামালার কারণে ছাগলগুলির মৃত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুন্দরবনের ওই টিমে থাকা সজনেখালি বিট অফিসার তথা জিনাতকে ঘুম পাড়ানিগুলিতে শুট করা মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, "আমরা ওই বাঘের মন বুঝে অভিযান শুরু করেছি। দেখা যাক কখন সাফল্য আসে।"
এভাবে টোপ সাজিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তা পরিষ্কার করে দিয়েছে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা। রেডিও কলারহীন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বাগে আনতে সেভাবে ঝুঁকি নিচ্ছেন না বনকর্মীরা। বনদপ্তরের নির্দেশ, কোনওরকম তাড়াহুড়ো নয়, একেবারে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে। যাতে কোনও রকম অঘটন না ঘটে। এছাড়া বান্দোয়ানের তিন বনাঞ্চল বান্দোয়ান এক, বান্দোয়ান ২, যমুনা ছাড়াও মানবাজার দুই বনাঞ্চলেও মাইকিং করে জঙ্গল সন্নিহিত এলারকার বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। ওই বন বিভাগের ডিওএফও পূরবী মাহাতো বলেন, "আমরা সব রকম চেষ্টা করছি যাতে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে বাগে আনা যায়। ওর গলায় রেডিও কলার না থাকায় ওর সঠিক অবস্থান আমরা বুঝতে পারছি না।"
এই রয়্যাল বেঙ্গল যে জিনাতের জন্য পাগলপারা তা বলছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা। সেই ৩১ ডিসেম্বর থেকে জিনাতের ফেলে আসা পথেই চড়কিপাক খাচ্ছে এই রয়্যাল।