নব্যেন্দু হাজরা: আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি নজরদারি তো রয়েইছে। বাজারে বাজারে ঘুরছে টাস্ক ফোর্স। এর পাশাপাশি কী কারণে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না তা দেখতে গিয়ে ভোটিং চক্রের হদিশ পেল সরকার। হুগলি এবং বর্ধমানের সাতটা বাজারে এই চক্র চলছে। যারা কিনা রোজ সন্ধেবেলা পরেরদিনের আলুর দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। অর্থাৎ রাজ্যে আলুর দাম নিয়ে মনোপলি ব্যবসা চালাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আলু কিনতে গিয়ে হাত পুড়ছে সাধারণ মানুষের। তেমনই কৃষকও এই বাড়তি দামের কোনও মুনাফা পাচ্ছেন না।
হুগলির তারকেশ্বর, ধনেখালি কুমরুল, বৈচি, ভান্ডারহাটি এবং বর্ধমানের মেমারি, কালনা, বুলবুলিতলায় এই ভোটিং বাজার কমিটির হদিশ মিলেছে। নবান্নসূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই ভোটিং বাজার কমিটিতে কারা করা রয়েছেন, তাঁদের তালিকা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। ভোটিং বাজার কমিটির প্রত্যেকটিতে পাঁচ থেকে সাতজন করে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যারা কিনা পরের দিন বাজারে আলুর দাম কত হবে, সেবিষয়ে ভোট দেন। অনেকটা নিলামের মতো। যেই দামের ক্ষেত্রে বেশি ভোট পড়ে, সেটাই নির্ধারিত হয় পরের দিনের জন্য। এই কমিটিত থাকা প্রত্যেকেই বেশ বড় মাপের আলু ব্যবসায়ী হিসাবেই পরিচিত। প্রত্যেকের গত একবছরের মোবাইলের কললিস্ট, তাঁদের লোকেশান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হবে বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "রাজ্য সরকার কৃষকদের শস্যবিমা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্তরকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও বাজারে আলুর দাম কমছে না। আসলে এর পিছনে মনোপলি একটি চক্র কাজ করছে। যাকে বলা হচ্ছে ভোটিং বাজার কমিটি। এরাই নিজেরা আলুর দাম বাড়িয়ে বাজারে আলু ছাড়ছে। আগের দিন সন্ধ্যাবেলা তাঁরা পরেরদিনের দাম ঠিক করে দিচ্ছে। আমরা এদের হদিশ পেয়েছি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নবান্ন সূত্রে খবর, হুগলি এবং বর্ধমানের যে সাতটি এই ভোটিং সিন্ডিংকেট মার্কেট রয়েছে, তারা রোজ সন্ধে ৬.৩০-৭ টার সময়ে ভোট দিয়ে দাম নির্ধারণ করে। বড় বড় আড়তদার এবং কোল্ডস্টোর মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাম নির্ধারিত হয়। এবিষয়ে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, "ভোটিং বাজার কমিটি কোনও দাম ঠিক করে না। ঠিক হয় চাহিদা এবং জোগানের উপর। প্রয়োজনে সরকার নির্ধারিত দামটা ঠিক করে দিক।"
এদিকে শনিবারও কলকাতার কয়েকটি বাজারে আলুর দাম ছিল ৩০ টাকার উপরে। কীভাবে এই বাজারগুলিতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার জন্য কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। টাস্ক ফোর্স হানা দিয়েছে একাধিক বাজারে।