shono
Advertisement

সকাল-সন্ধে কাটে মুচির কাজে, ষাটোর্ধ্ব সুজিয়া দেবীই নারী দিবসের অহংকার

জীবনের শেষ দিনও জুতো সেলাই করতে চান ইনি। The post সকাল-সন্ধে কাটে মুচির কাজে, ষাটোর্ধ্ব সুজিয়া দেবীই নারী দিবসের অহংকার appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:30 PM Mar 08, 2020Updated: 08:30 PM Mar 08, 2020

শংকর কুমার রায়, রায়গঞ্জ: কাজের ক্ষেত্রে ছোট-বড় ভেদ নেই, যেমন ভেদ নেই লিঙ্গেরও। তাই তো ভালবেসেই স্বামীর পেশাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের সুজিয়া দেবী রাম। সকাল থেকে সন্ধে, অক্লেশে, অনায়াসে আট থেকে আশি – বিভিন্ন বয়সিদের জুতো পরিষ্কার করে চলেন ষাটোর্ধ্ব সুজিয়া দেবী। ছোট থেকে বড় – সকলেই জুতো পরা পা এগিয়ে দিচ্ছেন তাঁর কাছে। আর সেইসব মানুষজনের পা থেকে হাসিমুখে জুতো খুলে নিজের হাতে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, কখনও আবার সেলাইও করছেন। যাঁর যেমন চাহিদা, সেটাই পূরণ করছেন বৃদ্ধা। শুধু একটা দিন নয়, বছরের ৩৬৫টা দিনই সুজিয়া দেবীকে স্যালুট!

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরে একমাত্র মহিলা মুচি ৬৩ বছরের সুজিয়া দেবী রাম। ইসলামপুরের লিচুবাগান বসতি এলাকার বাসিন্দা। স্বামী হর রাম বছর দশেক আগে প্রয়াত হয়েছেন। দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। কিন্তু বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে নিজেদের জীবনে তাঁরা ব্যস্ত। ফলে জন্মদাত্রী মায়ের দিকে নজর দেওয়ার সামান্য ফুরসত নেই। এই অবস্থায় চরম উপেক্ষিত বিধবার নিঃসঙ্গ জীবন। কিন্তু পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা। তাই বাধ্য হয়েই নিজের সংসার চালাতে সুজিয়া দেবী স্বামীর পেশাই বেছে নিয়েছেন। জীবন সংসারে অসম লড়াইয়ের মুখোমুখি তিনি। কিন্তু কান্না মনে চেপে সুজিয়াদেবী জুতো সেলাই করতে করতে হাসি মুখে বলেন, “যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন মানুষের জুতা সেবা করেই পেট চালাবো।” কর্মঠ ছেলেরা থেকেও যেন সুজিয়াদেবী সন্তানের স্নেহ, ভালোবাসা থেকে যোজন দূরের জীবন যুদ্ধের প্রতীক তিনি। সন্তানদের কাছে থেকে অবহেলা আর উপেক্ষাই জুটেছে। তাই এখন তিনি স্বনির্ভর মুচির ভূমিকায়।

[আরও পড়ুন: ‘কবিগুরু ক্ষমা করো’, আবির দিয়েই রবীন্দ্রভারতীর অশ্লীলতার প্রতিবাদ ৪ তরুণীর]

প্রতিদিন সকাল ন’টা বাজতে না বাজতেই লিচুবাগানের বসতি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পিডব্লিউডি এলাকার রাস্তায় জুতো মেরামতির কাজে মগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। রবিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসেও এই ছবির অন্যথা ঘটেনি। আসলে তাঁর জীবনে তো আলাদা করে কোনও দিবস নেই। নেই কোনও ছুটির দিনও। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকান। তারপর দুপুর গড়িয়ে বিকেলে ভাত-সবজি সহযোগে আহার সেরে সন্ধেবো ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরা। তারপর কোনওক্রমে একটু সেদ্ধভাত করে নৈশাহার। এটাই তাঁর রোজকার জীবন ছবি।

[আরও পড়ুন: দোলে বিশেষ মেনু হরিণের মাংস, খদ্দেরদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে শ্রীঘরে বিক্রেতা]

এদিন দুপুরে এক পাটি জুতো পালিশ করতে করতে সুফিয়া দেবী বললেন, “আমার আবার ছুটি! দোকান না খুললে চাল কিনব কীভাবে। তাই প্রতিদিন দোকান খুলতে হয়। মানুষের জুতো নিয়েই যেন শেষ দিন কাটাতে পারি।” এভাবেই স্বামীর পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সুজিয়া দেবী। তিনিই আজকের দিনে সবচেয়ে প্রণম্য, নারীদের কাছে আদর্শ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হোক তাঁর নামেই।

The post সকাল-সন্ধে কাটে মুচির কাজে, ষাটোর্ধ্ব সুজিয়া দেবীই নারী দিবসের অহংকার appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement