সুব্রত বিশ্বাস: দু’দিন বাদেই বিয়ের সানাই বাজবে। সেই মিলনের সুর যখন বিভোর করছিল মনকে, ঠিক তখনই বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে হল বিআর সিংয়ের চিকিৎসক শঙ্খ মণ্ডলকে। থরে থরে রাখা মৃতদেহ দেখে মন থেকে দূর হয়ে গেল সানাইয়ের সুর। চারিদিকে কান্নার রোলে ভারাক্রান্ত চিকিৎসকের মনও। ঠিক করলেন, ছাদনাতলায় যাওয়ার কথা পরে ভাববেন, আগে মানুষগুলির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব কি না, সেটা দেখবেন।
গত শুক্রবার, অর্থাৎ দুর্ঘটনার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পূর্ব রেলের ১৭ জন চিকিৎসক। ন’জন বিআর সিং, তিনজন লিলুয়া ও পাঁচজন অর্থপেডিকের চিকিৎসক। শঙ্খ মণ্ডল বিআর সিংয়ের চিকিৎসক। যাঁর দু’দিন পরই সঙ্গিনীর হাত ধরে নতুন জীবন শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে একেবারে উবে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দিন নিজেদের বেতন’, সাংসদদের আরজি বরুণ গান্ধীর]
তাঁর কথায়, “চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করাটা সবার আগে। শনিবার রাত পর্যন্ত চাপ থাকলেও রবিবার তার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এই মুহূর্তে অভিব্যক্তি, রোজকার বিষয় হলেও এই দুর্ঘটনা এত ক্ষতি রয়েছে, যে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। মায়ের চিকিৎসা করছি, অথচ সন্তানকে খুঁজে পাননি তিনি। তিনি নিজে যে গুরুতর আহত, সে দিকে মনই নেই তাঁর। চিন্তা, সন্তান বেঁচে আছে তো? তাঁদের বিলাপ অসহনীয়।”
গোটা ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া হবু কনের? বিয়ের আগে এইভাবে দুর্ঘটনাস্থলে চলে যাওয়াটাকে একেবারে স্বাভাবিক ভাবেই দেখছেন পাত্রী শ্রেয়সী বিশ্বাস। ফোনে সাহসও জুগিয়েছেন হবু স্বামীকে। এসএসকেএম থেকে পাশ করে ২০১৬ সালে রেলে যোগ দেন শঙ্খ। এরপর বিআর সিংয়ে পোস্টিং। হাওড়া মন্দিরতলার শঙ্খ মণ্ডলের এখন চিন্তা, কতজনকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ রাখা সম্ভব। বিয়ের বিষয়টা পরে ভাবা যাবে। চিকিৎসকদের ধর্মটাই যে সেবা!