সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন…। সাহারা মরুভূমি, বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত মরুরাজ্য। সেই বিশাল মরু পেরিয়ে দিগন্তের দিশা খুঁজলেন এক বঙ্গকন্যা। প্রথম মহিলা হিসাবে এই দুঃসাহসিক কৃতিত্ব অর্জন করলেন দুর্গাপুরের ৪৪ বছরের মহাশ্বেতা ঘোষ। মরুভূমির বুকে ২৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ নির্দিষ্ট সময়ে পাড়ি দিয়ে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে গেলেন তিনি।
দেশের ‘মাল্টি স্টেজ রেস’-এর অঙ্গ হিসাবে ‘আটলান্টাইড অর্গানাইজেশন ইন্টারন্যাশনাল’ সাহারা মরুভূমির উপর এই ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করে। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ফ্রান্সের বাসিন্দা প্যাট্রিক বয়ার এই প্রতিযোগিতা শুরু করেন। চলতি বছর ২৩ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল দক্ষিণ মরক্কোর সাহারায় এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ তো শুধু মরুভূমির তপ্ত বালিতে দৌড়ানো নয়। দিনে গড়ে ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে পথে ছড়িয়ে থাকে আরও অনেক ভয়ংকর প্রতিবন্ধকতা। প্রতিযোগিতার নিয়মও বেশ কড়া। ছ’দিনের এই মরু ম্যারাথন দৌড়ে দিনে গড়ে ৪০ কিলোমিটার দৌড়াতে হয়। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নির্দিষ্ট সময় ৩০ ঘন্টার মধ্যে ৯০ কিলোমিটার নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দৌড়াতে হয়। সারাদিন সব মিলিয়ে ১২ লিটার জল বরাদ্দ থাকে। খাবার নিজেকেই বইতে হয়। শব্দহীন মরুভূমির তাবুতে বিশ্রামের সময়ও একা থাকার দুঃসহ মানসিক চাপ নিতে হয়। দৌড় পথে একমাত্র জরুরি মেডিক্যাল সহায়তা পাওয়া যায় সংগঠকদের কাছ থেকে।
[আরও পড়ুন: সেনার অনুষ্ঠানের মঞ্চে হোঁচট, বক্তৃতা সেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বাইডেন, ভাইরাল ভিডিও]
এতো প্রতিকূলতা পার করে দুর্গাপুরের মেয়ে মহাশ্বেতার সাহারা জয়। এইবছরে এই মরুভূমি ম্যারাথনে সারা পৃথিবীর প্রায় ১১৫০ জন অংশ নিয়েছিলেন। ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মহাশ্বেতা ঘোষ (Mahashweta Ghosh)। ৩০ শতাংশ প্রতিযোগী এই ম্যারাথন শেষ করতে পারেননি। এই ম্যারাথন শেষ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনিও। এর আগে মাত্র ১৭ জন ভারতীয় এই ম্যারাথনে যোগ দিয়েছেন। ৯০ কিলোমিটার মাত্র ২৩ ঘন্টায় ম্যারাথন দৌড়ে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘দেশের সংহতির স্বার্থে প্রয়োজন’ রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিলের বিরোধিতায় আইন কমিশন]
মহাশ্বেতা দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা। প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী গগন ঘোষের মেয়ে। আইটি সেক্টরে কর্মরত, বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে গুরগাঁওয়ে থাকেন। মহাশ্বেতার প্যাশন ম্যারাথন অংশ নেওয়া। ২০১২ সালে ব্যাঙ্গালোরে প্রথম হাফ ম্যারাথনে(২১ কিলোমিটার) অংশ নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ফুল ম্যারাথন (৪২.২ কিলোমিটার) শুরু। হায়দরাবাদ, দিল্লি, মুম্বই থেকে আমেরিকা, জার্মানি, স্পেন, হাঙ্গেরি ও ইজরাইলে ম্যারাথন অংশ নিয়েছেন। ২০১৯ সালে রাজস্থানের পোখরানে প্রথম মরুভূমিতে ম্যারাথনের অভিজ্ঞতা। নিজস্ব ৬ হাজার ইউরো (প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা) খরচ করে সারা জয় করেছেন। বর্তমানে বিশ্বের ৬ শহরের ম্যারাথন সার্কিট সম্পুর্ণ করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থ। মহাশ্বতা জানান,”সাহারা জয় করতে পারবো ভাবিনি। পৃথিবীতে এই রকম অনেক ম্যারাথন আছে। আর্থিক সহায়তা বা স্পনসরশিপ পেলে তাতেও অংশ নিয়ে দেশের মান রাখবো।”