সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার বিরোধী দলগুলি এ রাজ্যের ঋণ নিয়ে মাঝেমধ্যেই গেল গেল রব তোলে। তবে তাদের জবাব মিলেছে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থার উপর একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের মার্চ শেষে বাংলায় ঋণের ভার ছিল ৪১.৯ শতাংশ। অর্থাৎ রাজ্যে ১০০ টাকার পণ্য উৎপাদন হলে, ঋণের দায় ছিল প্রায় ৪২ টাকা। তারপর তা ক্রমে নেমে আসে ৩৪.৬ শতাংশে। কিন্তু ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের শেষে তা হঠাৎ বেড়ে হয়েছিল ৩৯.৫ শতাংশ। এরপর অবশ্য লাগাতার নিচের দিকে সেই দায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২১ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ৩৮.২ শতাংশে। পরের আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০২১-২২-এর শেষে ঋণ ও জিএসডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ৩৫.৮ শতাংশে। চলতি বছর শেষে তা ৩৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বস্তুত, অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা এভাবে ব্যাখ্যা করছেন যে টাকার অঙ্কে রাজ্যের ঋণের দায় কমেনি। কিন্তু আয় বাড়ার কারণে ঋণের বোঝা লাঘব হয়েছে। গত অর্থবর্ষ শেষে রাজ্য সরকারের ঋণের অঙ্ক ছিল ৫ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষ শেষে, অর্থাৎ মার্চের মধ্যে তা ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। তা সত্ত্বেও প্রকৃত চিত্র হল ঋণের বোঝা কমছে। আরবিআইয়ের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে লাগাতার ভাবে কমছে ঋণ এবং জিএসডিপির অনুপাত। মোট কথা, রাজ্যে ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তার চেয়েও বেড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহর। অর্থাৎ বাংলায় ঋণের পরিমাণ বাড়লেও আর্থিক বৃদ্ধির হারের নিরিখে তা লাগাতার চলে যাচ্ছে পিছনের সারিতে।
[আরও পড়ুন: ‘যোগী আসলে কৃষ্ণ’, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে দরাজ সার্টিফিকেট গড়কড়ির]
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের প্রধান মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভোল পালটে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Benerjee) দূরদৃষ্টিতেই। তিনি রাজ্যের মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সামাজিক পদক্ষেপ করেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের হাতে যে টাকা যাচ্ছে, তার ৯৮ শতাংশই ফিরে আসছে বাজারে। অর্থাৎ মানুষ সেই টাকা খরচ করছেন। তাতে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। রাজ্যের নিজস্ব জিডিপি’তে তার প্রভাব পড়ছে। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুর কথায়, রিজার্ভ ব্যাংকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্সও জানিয়েছে, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে ঋণভার কমছে। এই মাপকাঠিতে বাংলা ভারতের সবক’টি রাজ্যকে একেবারে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ থেকে চার অর্থবর্ষে দেশের যে পাঁচটি রাজ্য জিডিপি-র তুলনায় ঋণ কমিয়েছে, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সফলতম। পাঞ্জাবের জিডিপি-র তুলনায় ঋণের পরিমাণ যেখানে বেড়েছে ১৫ শতাংশ, সেখানে ৩৩.৮৭ শতাংশ থেকে কমে বাংলার ঋণের ভার নেমে এসেছে ৩০.৮৮ শতাংশে। অর্থাৎ, বাংলায় ঋণের ভার বৃদ্ধির হার মাইনাসে নেমে এসেছে। এটা রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক।
[আরও পড়ুন: ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় কেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আরজি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে]
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্সের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে ২০২০-২১ আর্থিক বছর পর্যন্ত– ছ’বছরে রাজ্যগুলিতে যেভাবে ঋণের নিরিখে জিডিপির অনুপাতের বদল হয়েছে, তাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল জায়গায় রয়েছে বাংলা। তারপরই গোয়ার স্থান। একমাত্র এই দু’টি রাজ্যই লাগাতার ঋণের ভার কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বাকি সব ক’টি রাজ্যে ঋণের হার বেড়েছে। সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাব। সেখানে ঋণের হার বেড়েছে ১৫.৫ শতাংশ। এ রাজ্যে সেই ঋণের ভার কমেছে ১.৬ শতাংশ।