ধীমান রায়, কাটোয়া: তীব্র দারিদ্র্যের কারনে পড়াশোনা বেশি দূর হয়নি। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বিয়ের পরেও দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। স্বামী পাইপলাইনের মিস্ত্রি। তাতে সংসার চলে না। তাই আরও অর্থ উপার্জনের জন্য ৩২ বছরের বধূকে পরিচারিকার কাজ শুরু করতে হয়েছে। দৈনন্দিন এসব সংগ্রামের মাঝেই কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের (Burdwan East) আউশগ্রামের পরিচারিক কলিতা মাজি এবার নামছেন অন্য লড়াইয়ে। একুশের বিধানসভা ভোটে আউশগ্রাম থেকে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী তিনিই। বৃহস্পতিবার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম (Aushgram)বিধানসভা কেন্দ্রে(তফসিলি জাতি সংরক্ষিত আসন) বিজেপি প্রার্থী হিসাবে কলিতা মাজির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গুসকরা পুর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলিকা মাজি পরিচারিকার কাজ করেন। নাম ঘোষণার পরেই অবশ্য তিনি গৃহস্থবাড়িতে বলে এসেছেন, “আমাকে মাস দেড়েক ছুটি দিন। ভোটের জন্য ব্যস্ত থাকতে হবে যে।” নাম ঘোষণার পরেই বিজেপি প্রার্থী চলে আসেন স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের কর্মীরা।
[আরও পড়ুন: আরও সাত আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল আইএসএফ, ভাঙড়ে প্রার্থী নওশাদ]
গুসকরা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মাঝপাড়ার বাসিন্দা কলিতা মাঝির স্বামী সুব্রত মাঝি জলের পাইপলাইনের মিস্ত্রির কাজ করেন। এক ছেলে পার্থ মাঝি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। গুসকরা শহরের তিনটি বাড়িতে ঠিকাচুক্তিতে পরিচারিকার কাজ করেন কলিতা। ভোরের আলো ফুটতেই কাজে বেড়িয়ে পড়েন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটের কাশেমনগরে বাপের বাড়ি কলিতাদেবীর। বাবা মধূসুদনবাবু মারা গিয়েছেন। ৭ বোন, এক ভাই তাঁরা। বাবা জনমজুরি করতেন। কলিতা মাঝি বলেন, “টাকার অভাবে পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারিনি। এই আপশোস সারাজীবন থাকবে। তবে ভোটে জিতলে আমি গরিব ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। দারিদ্র্যের যন্ত্রণা আমি বুঝি।”
[আরও পড়ুন: মোদির সভায় পকেটমারদের দাপাদাপি! নিমেষে উধাও মোবাইল, টাকা]
বিজেপির আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় বিজেপির সহ-আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দল গরিব মানুষের স্বার্থে লড়াই করে। একজন সামান্য পরিচারিকাকে প্রার্থী করে দল সেটা বুঝিয়ে দিল। আমাদের প্রার্থীই জয়ী হবেন। এটা আমরা নিশ্চিত।” তবে কলিতার সামনে এখন অনেক বড় লড়াই। দৈনন্দিন কাজ থেকে ছুটি পেলেই সেই লড়াইয়ে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারবেন তিনি।