কালোমরিচ বা Piper nigrum হল মশলাজাতীয় ফসলের মধ্যে একটি। গবেষণায় প্রমাণিত যে এটি আন্তঃফসল হিসাবে কার্যকরভাবে নারকেল দিয়ে চাষ করা যেতে পারে। মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল, নারকেলের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে এবং মাটির ক্ষয় ও আগাছা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক দেবলীনা রায় এবং মশলা, আবাদি, ঔষধি ও সুগন্ধী বিভাগের গবেষক অনসূয়া শীল।
নারকেল বা কোকোস নুসিফেরা হল ভারতের উচ্চমূল্যের বৃক্ষরোপণ ফসলগুলির মধ্যে একটি। একক নারকেল গাছগুলিকে সাধারণত ৭.৫x৭.৫ মিটার ব্যবধানে রোপণ করা হয়ে থাকে, ফলে মোট ভূমি এলাকার মাত্র ২২.৩ শতাংশ সফলভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। উপরন্তু, গাছের পূর্ণ বৃদ্ধি গড়ে ফাঁকা স্থানের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবহার করে এবং সৌরবিকিরণের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহারে সক্ষম, যা শস্য বৈচিত্রের জন্য তাদের খুব অভিযোজিত করে তোলে।
নারকেল গবেষণাগারের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, নারকেল গাছের মধ্যে সর্বোত্তম ২৬ ফুট x ২৬ ফুট ব্যবধান বজায় রাখলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব। যদিও প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতির ব্যবহারে নারকেলের চাষ থেকে একক ফসল হিসাবে সর্বমোট ২৫ শতাংশ জমির সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এতে নারকেলের জমির উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির পর্যালোচনা মানও অনেকাংশে পড়ে যায়। রাজস্ব এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য, একটি নারকেল ভিত্তিক উচ্চ ঘনত্বের বহু প্রজাতির ক্রপিং সিস্টেম (HDMSCS) পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন।
[আরও পড়ুন: পুরনো চাল ভাতে বাড়ে! নোনা মাটিতে হারিয়ে যাওয়া ধানের ফলন বাড়াতে জোর কৃষিদপ্তরের]
এই পদ্ধতিতে শাকসবজি, ফল এবং মশলা অন্যতম গুণ সম্পন্ন ফসল চাষ করা যেতে পারে। এক বা দুটি উপযুক্ত আন্তঃফসলের সঙ্গে নারকেলের চাষে একদিকে যেমন জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের সুনিশ্চিত করে তেমনই এর সঙ্গে বেশ কিছু অতিরিক্ত সুবিধাও প্রদান করে। কালোমরিচ বা Piper nigrum হল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মশলাজাতীয় ফসলের মধ্যে একটি এবং বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে এটি আন্তঃফসল হিসাবে কার্যকরভাবে নারকেল দিয়ে চাষ যেতে পারে। মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল, নারকেলের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে এবং মাটির ক্ষয় ও আগাছা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তদুপরি, নারকেল গাছের চারপাশে মাটির আচ্ছাদনকারী ফসল হিসাবে গ্লিরিসিডিয়া চাষ করা যেতে পারে যা কালো মরিচ গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক দশায় সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি নারকেল গাছের চারিপাশের মাটিতে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে ও জৈব নাইট্রোজেন সারের উৎস হিসাবেও ব্যবহৃত হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, উচ্চ বৃষ্টিপাতযুক্ত এলাকায়, কালো মরিচ চাষে, পুষ্টি উপাদানের ক্ষয়ের কারণে মাটির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, যা ফসলের বিকাশকে প্রভাবিত করে।
রোপণের পদ্ধতি:
নারকেল বোল থেকে ১ মিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিকে সুবিন্যস্ত শিকড়যুক্ত কাটিং বা চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের আগে, উপরে উল্লিখিত স্থানে ৫০x৫০x৫০ সেমি পরিখা খনন করতে হবে এবং ১৫ দিনের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। রোপণের সময় গর্তে উপলব্ধ পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে এবং কাটিংটি রোপণ করতে হবে।
কালোমরিচের দ্রাক্ষালতার আরোহণের জন্য জীবিত বা নির্জীব উভয় ধরনের অবলম্বন ব্যবহার করা যেতে পারে। নির্জীব অবলম্বন হিসাবে, ১০x১০ সেন্টিমিটার প্রস্থের এবং ৩.৫ মিটার উচ্চতার কংক্রিটের খুঁটির ব্যবহার করতে হবে। অপরদিকে জীবন্ত অবলম্বন হিসাবে গ্লিরিসিডিয়া ব্যবহার জ্ঞাপিত। তবে মরিচের ছয় মাস আগে গ্লিরিসিডিয়া চারা রোপণের প্রয়োজন। গ্লিরিসিডিয়া অবলম্বনটি ২.৫ মিটার লম্বা হওয়া উচিত এবং দুটির মাঝখানে কমপক্ষে ৩ সেন্টিমিটার ফাঁক বজায় রাখতে হবে। তবে, অবলম্বনে ব্যবহৃত গ্লিরিসিডিয়া দুটি উপায়ে রোপণ করা যেতে পারে। অবলম্বনের নিচে ১৫ সেন্টিমিটারের একটি গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের মধ্যে অবলম্বনটিকে সরাসরি বসিয়ে দিতে হবে।
গ্লিরিসিডিয়া পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে এবং তার জন্য শুরুতেই উপরের দিকে থাকা সবচেয়ে ভাল বিকাশমান দুটি অঙ্কুর ছিঁড়ে ফেলতে হবে। দুটি গাছের মধ্যে ন্যূনতম ব্যবধান এক ফুট বজায় রাখতে হবে। যখন গ্লিরিসিডিয়া শাখাগুলি ৩ থেকে ৩.৫ মিটার উচ্চতায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই অত্যধিক বৃদ্ধি এড়াতে গাছের উপরের অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অন্তত চারটি শাখা বিদ্যমান থাকে। গ্লিরিসিডিয়ার সঠিক পরিচর্যার জন্য সমস্তরকম রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল অবলম্বন করতে হবে। গাছের উচ্চতা যেন কোনওমতেই ৪ থেকে ৫ মিটারের বেশি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। না হলে সেটি কালো মরিচের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।