শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: চোখ মেললেই সবুজ কৃষিজমি জুড়ে শুধুই সারি সারি ভুট্টা গাছ। বিগত কয়েক বছর ধরে ভুট্টা আবাদের দাপটে আলু চাষে চরম অনীহা জেলার অধিকাংশ কৃষকেরা। তার উপর উৎপাদিত আলু মজুত রাখার সরকারি হিমঘর এতবছরে একটিও উত্তর দিনাজপুরে গড়ে উঠেনি। অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর হাতেগোণা কয়েকটি বেসরকারি হিমঘরই ভরসা। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে অধিকাংশ আলু চাষিদের সুযোগ মেলে না। এর ফলে মাঠ থেকে তুলে নতুন আলু অত্যন্ত কম দামে খোলা বাজারে ছেড়ে দিতে কার্যত বাধ্য হন নিরুপায় প্রান্তিক কৃষক পরিবার।
ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই বাজারে নতুন আলুর কেনাবেচা শুরু হলেও উত্তরের এ জেলার খুব সামান্য কৃষিজমিতে ডিসেম্বর থেকে মূলত আলু লাগানো শুরু হয়। তবুও জেলার অনেক আবাদি জমিতে এখনও আলু চাষের সবে প্রস্তুতি চলছে। অথচ পাশ্ববর্তী বিহারের জমিতে নানা ধরনের নয়া ছোট ছোট আলু রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরের হাট-বাজারে দিব্যি বিকোচ্ছে। তবে এ জেলার কৃষি জমিতে উৎপাদিত খুব সামান্য পরিমাণের আলু বাজারে পৌঁছতে এখনও ঢের সময় বাকি রয়েছে বলে স্থানীয় আলু চাষিদের তরফে জানা যায়।
উল্লেখ্য, ইটাহার ব্লকের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকার জমিতে শীতকাল শুরুতেই রবি মরশুমের আলু চাষে শামিল হন স্থানীয় একাংশ চাষি। যদিও গোয়ালপোখরে এখনও আলু চাষ শুরু হয়নি। তবে ভোজন রসিকদের মুখে মুখে ভেসে বেড়ানো জ্যোতি আলু কিংবা নৈনিতাল আলুর মতো জনপ্রিয় প্রজাতির আলু এ জেলায় চাষ হয় না। সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ইসলামপুরে কৃষি জমিগুলোতে লালচে ছোট আলু ও সাদা পোখরাজ আলু উৎপাদনের আধিক্য বেশ। অন্যদিকে বিহার আর বাংলাদেশ সীমান্তের মাঝে অবস্থিত গোয়ালপোখর এলাকায় কুরদি-উদয় সহ ‘এস- ১৬’ এবং ‘এস- ৪০৩'’প্রভৃতি ধরনের আলু চাষাবাদে স্বচ্ছন্দ্য স্থানীয় চাষিরা। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অর্থবর্ষে জেলার মাত্র ২৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল।
অথচ আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল,সারা জেলায় মোট কৃষিজমির পরিবার ২ লক্ষ ২ হাজার ৮৫০ হেক্টরের বেশি। সেখানে ভগ্নাংশ কৃষিজমিতেও হরেক আলুর ছটাক পরিমাণ আবাদ হয় না। ববং বলা যায়, উপযুক্ত দাম না মেলায় আলুচাষে উৎসাহ ক্রমেই ভাটা পড়ছে সাধারণ কৃষকদের। তারউপর উৎপাদিত অতিরিক্ত আলু মজুত করার জন্য জেলায় মাত্র সাতটি হিমঘর। ফলে মাঠ থেকে কৃষকের ঘরে বেশিদিন জমিয়ে রাখার ঝুঁকি মেলা। স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্মকালে বেশি দাম মেলার আগেই মজুতদারদের খপ্পরে কম দামে আলু বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। যদিও ব্যাপক হারে ভুট্টা আবাদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ জেলা কৃষি অধিকর্তা প্রিয়নাথ দাস। তিনি বলেন, ‘‘শীতের প্রভাবে জেলায় বেশি। তাই আলু চাষের সময় এখনও রয়েছে।’’
