অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: দিনেদুপুরে আচমকা বিস্ফোরণ শিলিগুড়ির (Siliguri) করোনেশন ব্রিজে। বিকট শব্দ আর তীব্র ধোঁয়ায় চমকে উঠল চারপাশ। বৃহস্পতিবার সকালে ওই সেতুর উপর বিস্ফোরণ (Blast) হয়। বিস্ফোরণে দাউদাউ জ্বলে ওঠা ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে অবশ্য জানা গিয়েছে, সেবক সেতুতে সিনেমার শুটিং চলছিল। শুটিংয়ের জন্যই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু হেরিটেজ তকমা পাওয়া সেতুতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কীভাবে এখানে এই ভয়াবহ দৃশ্য শুট করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিনোদ মেহেরার ছেলে রোহন মেহেরা একটি হিন্দি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন। তার নাম ‘কালার’। উত্তরবঙ্গে (North Bengal) চলছে সিরিজটির শ্যুটিং। প্রথমদিকে ওই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং হয়েছে তাকদহের ১২ নম্বর কলোনির বাংলোতে। তারপর দার্জিলিংয়ের উইন্ডেমেয়ার হোটেল-সহ ম্যাল রোডেও শ্যুটিং হয়েছে ওই ওয়েব সিরিজের একাংশের।
[আরও পড়ুন: রামপুরহাট কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের পাশে রাজ্য, চাকরি ও আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
বৃহস্পতিবার ওই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং একশন সিনেমার অংশ হিসেবে করোনেশন ব্রিজে (Coronation Bridge)ওই বিস্ফোরণ করা হয়। যদিও প্রযোজকদের দাবি, সম্পূর্ণ নিরাপত্তা মেনেই বিস্ফোরণের শুটিং করা হয়েছে।। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সেভকের করোনেশন সেতু হেরিটেজ শিরোপাধারী। তার উপর ব্রিটিশ আমলের ওই ঐতিহাসিক সেভকের সেতু এমনিতেই দুর্বল। সেসব সত্ত্বেও কীভাবে পুলিশ প্রশাসন ওই সেতুর উপর শ্যুটিংয়ের অংশ হিসেবে বিস্ফোরণ ঘটানোর অনুমতি দিলো। সেইসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম ও দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বালকর। তবে উত্তরবঙ্গের আইজি দেবেন্দ্র প্রকাশ সিং জানান, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে এই শুটিং হয়েছে। গোটা শুটিং ইউনিটকে থানায় ডাকা হয়েছে, সেখানে একজনকে আটক করা হয়েছে। কালিম্পং থানায় একটি মামলা শুরু হচ্ছে। অভিযোগ, ওই বিস্ফোরণের পর ক্ষতি হয়েছে সেতুর একাংশের। তার উপর সেতুটি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর এবং ডুয়ার্স সহ শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সম্বল ওই সেতুটি। শ্যুটিংয়ের জেরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে প্রশাসনের তরফে ওই বিস্ফোরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
[আরও পড়ুন: শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের বাংলা বোর্ড ভুলে ভরা, চালুর আগে বিতর্ক]
কার্শিয়াংয়ের মহকুমাশাসক এজাজ আহমেদ বলেন, “আমার থেকে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। পুলিশ দিয়েছে কিনা জানা নেই। যাচাই করে দেখছি।” ওই বিস্ফোরণের পরই সরব হয়েছে ডুয়ার্স ফোরাম ফর সোশ্যাল রিফর্মস। ওই সংস্থার সম্পাদক চন্দন রায় বলেন, “ওই বিস্ফোরণ দৃশ্যের শুটিং করা উচিত হয়নি। কারণ শতাব্দী প্রাচীন ওই সেতুর এমনিতেই দুর্বল। এর আগেও আমরা একাধিকবার আন্দোলন করেছি। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসন কীভাবে ওই বিস্ফোরণের অনুমতি দিল? আমরা আগামী শনিবার সেবক থানায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাব।”