shono
Advertisement

বন্দিদশা কাটিয়ে দীপাবলিতে ঘরে ফিরল ছেলে, খুশির হাওয়া গ্রামে

ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠছেন সিঙ্গুরের দেবাশিস৷ The post বন্দিদশা কাটিয়ে দীপাবলিতে ঘরে ফিরল ছেলে, খুশির হাওয়া গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:03 AM Nov 09, 2018Updated: 09:03 AM Nov 09, 2018

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা দেখে এবং পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সুদূর ইরানে কাজের সন্ধানে ছুটে গিয়েছিলেন সিঙ্গুরের মোল্লাসিমলা গ্রামের যুবক দেবাশিস মৌলিক। কিন্তু কোম্পানির সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তাঁকে বন্দি করে রাখা হয় একটা ঘরে। সেখান থেকে ঘরে ফেরার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় দীর্ঘ আট মাসের বন্দিদশা কাটিয়ে দীপাবলির দিন ঘরে ফিরল ঘরের ছেলে। দেবাশিস ফিরতেই গ্রামে খুশির হাওয়া। গোটা গ্রাম যেন দিওয়ালির উৎসবের ছোঁয়ায় নতুন করে মেতে উঠেছে। বুধবার রাতেই দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরেছে দেবাশিস।

Advertisement

[শাসকদলের বিধায়ককে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি, চাঞ্চল্য চন্দ্রকোণায়]

দীর্ঘ আট মাসের বন্দি জীবনের কাহিনি বলতে গিয়ে এখনও শিউরে উঠছেন সিঙ্গুরের এই যুবক। দেবাশিস জানান, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি তিনি দিল্লি হয়ে তেহরানে পৌঁছন। সেখান থেকে আরও ২৪ ঘণ্টা বাস জার্নি করে জায়গান বলে একটা জায়গায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই এক শেঠের সোনার গয়না তৈরির কোম্পানিতে কাজে যোগ দেন। দুই মাস কাজ করার পর তাঁকে অন্য একটি জায়গায় কাজে বহাল করা হয়। সেখানে কোম্পানির এক কর্ণধারের সঙ্গে দেবাশিসের কাজ নিয়ে মতান্তর হয়। দেবাশিস প্রতিবাদ করলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর দেবাশিস কোম্পানির শেঠকে ফোন করে ঘটনার কথা জানালে তাঁকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলা হয়। কিন্তু এরপর থেকেই তাঁকে একটা আলাদা ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। আর ঘরের বাইরে সবসময় বন্দুকধারীরা তাঁকে পাহারা দিত। কোম্পানিতে কাজে যোগ দেওয়ার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয় তারা।

[প্রসূতির পেটে অস্ত্রোপচারে নষ্ট গর্ভস্থ ভ্রুণ, গ্রেপ্তার হাতুড়ে চিকিৎসক]

দেবাশিস জানান, তাঁকে এক মাসের টুরিস্ট ভিসায় ইরানে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কোম্পানি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়নি। এরই পাশাপাশি তার পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বন্দি অবস্থায় তিনি বহুবার বাইরে বেরনোর চেষ্টা করলেও নিরাপত্তারক্ষীদের বন্দুকের নলের সামনে ভয়ে কুঁকড়ে যান। এমনকী তাঁকে দু’বেলা খেতে পর্যন্ত দেওয়া হত না। হাতে টাকাপয়সাও দিত না। এরকম পরিস্থিতিতে এই রাজ্যের আর যেসব বন্ধুরা ইরানে কাজে গিয়েছিল সেই বন্ধুরাই তাঁদের খাবার থেকে তাকে খেতে দিতেন। খাবার দেওয়ার কথা জানতে পেরে কোম্পানি চরম অমানবিকভাবে তাঁর বন্ধুদের মাইনে থেকে খাবারের দাম কেটে নিত। এইরকম অসহনীয় এক পরিস্থিতির মধ্যে ন্যাশানাল অ্যান্টি-ট্রাফিকিং কমিটির চেয়ারম্যান জিন্নার আলি তাদের কাছে দেবদূতের মতো হাজির হন। দেবাশিসের এক বন্ধুর স্মার্টফোনের মাধ্যমে জিন্নার আলির যোগাযোগ হয়। জিন্নার আলির উদ্যোগে ১০ দিন আগে দেবাশিসের অন্য বন্ধুরা দেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকেই মানসিকভাবে দেবাশিসকে একাকিত্ব গ্রাস করে। দেবাশিসের পরিবারও ঘরের ছেলের ঘরে ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে। দেবাশিস ঘরে ফেরার আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানান, এনএটিসি-র চেয়ারম্যান জিন্নার আলি কিন্তু ফোনে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার খোঁজখবর রাখতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরই প্রচেষ্টায় ঘরে ফেরার স্বপ্ন সফল হয়। দেবাশিস বলেন, “আমার কাছে জিন্নার আলি দেবদূতের মতো। তার ঋণ কোনও দিনই শোধ করতে পারব না।” দূর থেকে জিন্নার আলিকে প্রণাম জানিয়ে দেবাশিসের মন্তব্য, “আমার এই নবজন্ম ওই মানুষটার জন্যই। নইলে অন্ধকারেই এই জীবনটা শেষ হয়ে যেত।”

The post বন্দিদশা কাটিয়ে দীপাবলিতে ঘরে ফিরল ছেলে, খুশির হাওয়া গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement