স্টাফ রিপোর্টার: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose) কেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি পাবেন না? ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর যেভাবে স্বাধীন সরকার ঘোষণা করে শপথ নিয়েছিলেন তিনি, কেন তার যথাযথ প্রতিফলন থাকবে না? এই বিতর্কের আবহেই বড়সড় ঘোষণা করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। নেতাজির প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়টি এবং সেই সময়ের বিস্তারিত ঘটনাক্রম এবার নতুন প্রজন্মের পাঠ্যবইতে আনার লক্ষ্যে সিলেবাস কমিটিকে যথাযথভাবে সবটা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিলেন তিনি।
মন্ত্রীর এই নির্দেশের ফলে স্কুল পড়ুয়াদের পাঠ্যসূচিতে নেতাজিপর্ব যেমন সবিস্তার হবে, ঠিক তেমনই দেশনায়ককে মর্যাদাদানে আরও একধাপ এগিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)। উল্লেখ্য, ২৩ জানুয়ারি রবিবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইটে ব্রাত্যকে অনুরোধ করেন নেতাজির প্রধানমন্ত্রিত্বের সেই সব দিন সবিস্তার স্কুলপাঠ্যে আনার জন্য।
[আরও পড়ুন: বাগুইআটিতে বিবাহ অনুষ্ঠানের মাঝেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত অন্তত এক]
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘দেশে ফের একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার। এই আবহে ঔপনিবেশিক ভারতের বাঙালি প্রধানমন্ত্রী নেতাজির চর্চা খুবই যথার্থ। সিলেবাস কমিটিকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলব। সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে নেতাজির ট্যাবলো বাতিল করেছে কেন্দ্র। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করার পর নামকাওয়াস্তে দিল্লিতে একটি মূর্তি বসানো হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন শুধু মূর্তি বসালেই হবে না, সেই মানুষটিকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হবে। নেতাজিকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর কোনও বিন্দুমাত্র লক্ষণ কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সিলেবাসে নেতাজি নিয়ে বিস্তারিত চর্চা করছে না। কারণ নেতাজি নিয়ে তাদের কোনও আবেগ নেই। তাইহোকু বিমান বন্দরে কী হয়েছিল তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নেতাজি যা করেছিলেন, অহিংস এবং সহিংস আন্দোলনের মেলবন্ধনে তিনি যা করেছিলেন তা অবশ্যই চর্চার বিষয়। স্বাধীন ভারতে প্রধানমন্ত্রিত্বের মূল দাবিদার ছিলেন নেতাজি। কিন্তু তিনি তা পারেননি। এখন আবার একজন বাঙালির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা প্রবলভাবে তৈরি হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনও প্রাদেশিক বা আঞ্চলিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকেও সংসদীয় গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদে ঢাকা একজন বাঙালির চর্চা হোক আমি সিলেবাস কমিটিকে বলব বাঙালি কৌম চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর স্বাধীন সরকার ঘোষণা করেন নেতাজি। তিনি প্রধানমন্ত্রী, সঙ্গে যুদ্ধ ও বিদেশ দপ্তর, সেই সঙ্গে আরও কাজের বিভাগ ঘোষণা হয়। এরপর আন্দামান-নিকোবর দ্বীপ নেতাজির সরকারকে দেন জেনারেল তোজো। একাধিক দেশ স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতিও দেয়। পূর্বাঞ্চলে আজাদ হিন্দ সেনা ঢুকে তেরঙ্গা পতাকাও তোলে। এই আজাদ হিন্দ সরকারের নীতি, কাজকর্ম সবিস্তার স্কুলপাঠ্যে নেই।
প্রশ্ন হল, ব্রিটিশরা স্বীকৃতি না দিলেও আমরা কেন স্বীকৃতি দেব না? ২৩ অক্টোবর জাপান ওই সরকারকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। চিন, মানচুকু, ইতালি, জার্মানি, ফিলিপিন্স, শ্যাম ও বর্মা দেশগুলি মান্যতা দিয়েছিল নেতাজির সরকারকে। ভারত এখনও দেয়নি। ১৯৪৪ সালের ৪ জুলাই জুবিলি হলে নতুন সরকার এক বছরের মধ্যে কত কী কাজ করেছে, সেগুলিও তুলে ধরা হয়। এমনকী, জাতীয় ব্যাংকও স্থাপন করেছিলেন তাঁরা। এই ধরনের বেশ কিছু পদক্ষেপকে ব্রিটিশরা স্বভাবতই মেনে নেবে না, কিন্তু, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের স্কুলপাঠ্যেও যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত উল্লেখ ছাড়া বিস্তারিত কিছু নেই।
যদি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকারও হয়, কেন তার স্বীকৃতি থাকবে না? প্রথম প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি যদিও কেন্দ্রের বিষয়, এখানে রাজ্য একা কিছু করতে পারবে না; কিন্তু ঐ ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলি পাঠ্যসূচিতে আনলেও স্বীকৃতির কর্তব্যপালন করা হবে। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে এবার গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ করবে সিলেবাস কমিটি। এই সিদ্ধান্তের পর ব্রাত্য বসুকে ধন্যবাদ জানিয়েও টুইট করেছেন কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।