গোবিন্দ রায়: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার কলকাতা হাই কোর্টের নজরে এক অভিনেত্রী। তাঁর নাম উল্লেখ করে হলফনামা পেশের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এদিকে, যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের ফ্ল্যাট থেকে গত ডিসেম্বরের প্রাথমিক টেটের ওএমআর শিট উদ্ধারের ঘটনায় বিস্মিত বিচারপতি। যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের জমি দিয়ে আন্দামান পাঠিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বিস্ময় প্রকাশ করে পর্ষদের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “কুন্তল ঘোষের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ১৮৯টি টেটের ওএমআর শিট, অ্যাডমিট কার্ড কাদের? কিছু দুষ্কৃতী রাজ্যটাকে ধ্বংস করে দেবে? কী হচ্ছে এটা? কী করে কুন্তলের কাছে গেল ওএমআর শিট, অ্যাডমিট কার্ড?” ইডি’র কাছে ১৮৯ জনের তথ্য তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক পর্ষদের আইনজীবী বলেন, “আমরা বিস্মিত, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এত চেষ্টা করার পরেও এই ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গিয়েছে কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে। আমরা ওএমআর শিটের কপি পরীক্ষার্থীদের দিয়েছি। কারণ যখন ফলাফল বেরবে তখন যেন প্রার্থীরা উত্তর যাচাই করতে পারেন। কোনও প্রার্থী যদি এগুলো জেরক্স করে কাউকে দেন, আমরা কী করতে পারি? আমাদের তরফ থেকে কোনও খামতি নেই। আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।”
[আরও পড়ুন: জুতো পরেই গান্ধীঘাটের অনুষ্ঠানে যোগ রাজ্যপাল, সেচমন্ত্রীর! শুরু বিতর্ক]
এরপর উষ্মাপ্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, “কিছু দালাল এখনও চাকরি বিক্রির চেষ্টা করছে, আর কিছু দালাল তাদের আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি এই ১৮৯ জনের নাম আর রোল নম্বর জানতে চাই। আগামী ২৫ বছর তারা যেন কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তার ব্যবস্থা আমি করব। এত সাহস হয় কী করে? এরা কারা? আমি এদের কিছুটা জমি দিয়ে আন্দামান পাঠিয়ে দেব। চাষ করে খাবে।” এরপরই দুর্নীতিগ্রস্তদের কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বিচারপতি বলেন, “কাউকে রেয়াত করা হবে না। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”
বিচারপতির আরও দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন এক অভিনেত্রী। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি এক অভিনেত্রী তিনটি ফ্ল্যাটকে ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জানতে চাই কে তিনি? অভিনেত্রীকে দেখতে চাই। তাঁর সিনেমাও দেখতে চাই।” অভিনেত্রীর নাম জানিয়ে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “ইঙ্গিতে কিছু বলা যায় না। তথ্য প্রমাণ থাকলে তার নথি দিন। হাওয়ায় হাওয়ায় গগনে গগনে কথা বলে ইঙ্গিত দেওয়ার কোনও মানে হয় না।”
উল্লেখ্য, চিনার পার্কে কুন্তল ঘোষের জোড়া ফ্ল্যাটে তল্লাশির পর গত ২১ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে একটি খাতা এবং একটি ডায়রি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই ডায়রিতে সাংকেতিক হরফে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখা রয়েছে বলেই ইডি সূত্রে খবর। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হল কুন্তলের ফ্ল্যাট থেকে গত ১১ ডিসেম্বরের টেটের অ্যাডমিট কার্ড, ওএমআর শিট, ডিএলএড সার্টিফিকেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কীভাবে কুন্তলের কাছে ওই নথি পৌঁছল, স্বাভাবিকভাবেই সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কি ২০২২ সালে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া টেটেও চাকরি বিক্রি হয়েছে? গত বছর যে সময় টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সেই সময়ে নিয়োগ দুর্নীতির মূল চাঁইদের অনেকেই জেলবন্দি। তাহলে কে বা কাদের নির্দেশে দুর্নীতি করে কুন্তল, এমনই নানা প্রশ্নের খোঁজে তদন্তকারীরা।